আমদানিতে নতুন নির্দেশনা, ঋণপত্র খুলতে আরও তথ্য দিতে হবে
ডলার–সংকট কাটাতে আমদানি কড়াকড়ির পাশাপাশি আমদানি পণ্যের মূল্য যাচাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ধারাবাহিকতায় আমদানি পণ্যের আরও বিস্তারিত তথ্য জমা দেওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এতে পণ্যের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ, মান, ব্র্যান্ড, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেজিং–সংক্রান্ত তথ্য ও গ্রেডের পাশাপাশি আরও নানা তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানিয়েছে। আমদানিকারকেরা যাতে এসব শর্ত মানেন, সে জন্য বিভিন্ন ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যের আমদানিকারক-রপ্তানিকারক, প্রস্তুতকারক দেশের নাম এবং আন্তর্জাতিক বাজারে সংশ্লিষ্ট পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে ঋণপত্র খোলার নিয়ম রয়েছে। এ ছাড়া আমদানি পণ্যের নাম, বিবরণ, পরিমাণ, মূল্য ইত্যাদি বিষয়ে যথাযথ তথ্য ও বর্ণনা দেওয়ার বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে।
নতুন করে আরও কিছু নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সঠিকভাবে আমদানি পণ্যের দাম যাচাইয়ের সুবিধার্থে রপ্তানিকারকদের এদেশীয় এজেন্টের সরবরাহ করা নথিতে আমদানি পণ্যসম্পর্কিত আরও কিছু বিষয় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পণ্যের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ, মান, ব্র্যান্ড, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেজিং–সংক্রান্ত তথ্য ও গ্রেড – যা দ্বারা পণ্যের গুণগত মান পৃথক করা যায়। এ ছাড়া ইউনিট প্রতি মূল্য ও পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে।
একই নথির মাধ্যমে একাধিক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আলাদাভাবে প্রতিটি পণ্যের বিবরণ, মান, ব্র্যান্ড, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেজিং–সংক্রান্ত তথ্য ও গ্রেডের পাশাপাশি আরও নানা তথ্য ও গ্রেড উল্লেখ করতে হবে। একই নথির মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সাধারণভাবে সব পণ্যকে একটি নির্দিষ্ট ইউনিট (কেজি, লিটার অথবা পিস) পরিমাপ না করে তাদের প্রকৃতি অনুযায়ী প্রযোজ্য ইউনিটে উপস্থাপন করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অনুমোদিত আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য বেঁধে দেওয়া নিয়ম এবং পরিবহনভাড়া যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হবে। আমদানি পণ্য সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে এইচএস কোড ৬ ডিজিট ও পরের ২ ডিজিট উল্লেখ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা নানা মাধ্যমে অর্থ পাচার করছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো কম মানের পণ্য আমদানি করা। এটা বন্ধ করা গেলে অর্থ পাচার অনেকটা বন্ধ হবে। ডলার–সংকটও কমে আসবে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে দেশে ডলার–সংকট চলছে। এ সময় ডলারের দাম বেড়ে ৮৭ টাকা থেকে ১১০ টাকায় উঠেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। এরপরও ডলার–সংকটে চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। বন্ধ হয়নি অর্থ পাচার। উপরন্তু বিদেশে বাংলাদেশিদের সম্পদও বাড়ছে।