টেকসই রেটিংয়ে চার বছর ধরে শীর্ষে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও আইডিএলসি

বাংলাদেশ ব্যাংকছবি: সংগৃহীত

বেসরকারি খাতের ১৩ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে সাসটেইনেবল টেকসই রেটিং প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ১০টি ব্যাংক ও ৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক বছর ধরে এই তালিকা প্রকাশ করে আসছে। এবারের তালিকাটি করা হয়েছে ২০২৩ সালের তথ্যের ভিত্তিতে। টানা চার বছর ধরেই তালিকায় রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ সম্প্রতি টেকসই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করে। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম সাজানো হয়েছে আদ্যক্ষরের ভিত্তিতে। সে জন্য মানের দিক থেকে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আছে বা কোনটি পিছিয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এবার টেকসই ১০ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংক। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো আইডিএলসি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স।

মূলত পাঁচটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর টেকসই রেটিং বা মান যাচাই করা হয়েছে। সূচকগুলো হলো টেকসই অর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম, পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন, টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচক ও ব্যাংকিং সেবার পরিধি। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ঋণ প্রদান বা অর্থায়ন ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পরিপালনসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। যেমন অনেক ব্যাংক এখন সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার করছে, গাছ কাটা কমাতে কাগজের ব্যবহার কমিয়েছে এবং অফিসে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই তালিকায় দি সিটি ব্যাংকের টানা চার বছর ধরে স্থান পাওয়া নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে বলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন। তিনি বলেন, ‘টানা চারবার শীর্ষ তালিকার ব্যাংক হতে পেরে আমরা সত্যি আনন্দিত। আমি মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি, এবারে সর্বোচ্চ নম্বর আমরাই পেয়েছি। যেসব সূচকের ওপর নির্ভর করে এই রেটিং করা হচ্ছে, আমরা তার সব কটিতেই ভালো অবস্থানে আছি। মূল ব্যাংকিং সূচকগুলোয় ভালো করার ওপর অর্ধেক নম্বর ধরা হয়। এটা খুব ভালো কথা। অর্থাৎ শুধু টেকসই ও সবুজ অর্থায়নে মন দিলেই এই তালিকায় থাকা যাচ্ছে না। আগে ভালো ব্যাংক হতে হয়। সেটাই হওয়া উচিত। গ্রাহকের আস্থা বাড়াতে এই ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই।’

২০২২ সালের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি গত বছরের তালিকায় সাত ব্যাংক ও চার আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থান পায়। তখন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ছিল ব্র্যাক ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও লংকান অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স।

২০২১ সালের তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত ২০২২ সালের সাসটেইনেবল রেটিং বা টেকসই মানের তালিকায় ছিল ১০ ব্যাংক ও ৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেবার তালিকায় থাকা ব্যাংকগুলো ছিল ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, এনআরবি ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল অগ্রণী, এসএমই ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বিআইএফএফএল, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স।

আইডিএলসি ফাইন্যান্সও টানা চার বছর ধরে শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা মাসুদ কে মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইডিএলসি সর্বদা গ্রাহকসেবার মান সমুন্নত রেখে অর্থায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রতিবছর অর্থায়নের ক্ষেত্রে গ্রিন ফাইন্যান্স, পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং ও জলবায়ুবিষয়ক অর্থায়নে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এটি আমাদের একটি টেকসই অর্থনীতি গঠনে সাহায্য করছে। এর সঙ্গে আমরা সিএসআরের বিভিন্ন কার্যক্রমেও অংশ নিয়ে থাকি। এভাবে সব আর্থিক মানদণ্ডে আইডিএলসি ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং সবার আস্থা অর্জন করেছে। এই পুরো ব্যাপারই আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল রেটিংয়ে ভালো অবস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করেছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, টেকসই কোর ব্যাংকিং সূচকের মধ্যে ব্যাংকগুলোর ঋণের মান, মূলধন পরিস্থিতি, এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ কারণে নতুন অনেক ব্যাংক যুক্ত হচ্ছে, আবার কতগুলো বাদ পড়েছে।

তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এই মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে একটি ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক চিত্র প্রকাশ পায় না। ফলে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সেরা, এর মাধ্যমে তা বলা যাবে না।