এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদে ফিরছেন বিতর্কিত সাবেক তিন পরিচালক

বিতর্কিত সাবেক তিন পরিচালককে পর্ষদে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের (এনআরবিসি) বর্তমান পর্ষদ। এই তিন পরিচালক অনিয়মের কারণে বিভিন্ন সময় পর্ষদ থেকে বাদ পড়েছিলেন। এখন তাঁদেরই পর্ষদে যুক্ত করে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইছে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। তবে এ বিষয়ে এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মতি পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পরই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারবে ব্যাংকটি।

যে তিনজন সাবেক পরিচালককে পর্ষদে যুক্ত করা হচ্ছে, তাঁরা হলেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফরাসত আলী, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি তৌফিক রহমান চৌধুরী এবং যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের নেতা সরোয়ার জামান চৌধুরী।

ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখতে ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ রাশিয়া শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম তমাল পারভেজ পুরোনো কয়েকজন পরিচালককে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। বর্তমান পর্ষদের বেশির ভাগ পরিচালক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাঁরা সরকার পরিবর্তনের পর অনুপস্থিত। কেউ কেউ ছুটিও নিয়েছেন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালকদের সশরীর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করায় চেয়ারম্যান তমাল পারভেজসহ বেশ কয়েকজন পরিচালক পদ হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে পুরোনো তিন পরিচালককে পর্ষদে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা যায়, গত ২১ জানুয়ারি ব্যাংকের ১৯৫তম পর্ষদ সভায় এই তিনজনের নিয়োগ অনুমোদন করা হয়। গত বছরের জুলাইয়ে ফরাসত আলীর স্ত্রী শাহানারা বেগম আলী ব্যাংকটির পরিচালক হন; কিন্তু এখন ফরাসত আলী নিজে পর্ষদে যোগদানে আগ্রহী হওয়ায় সম্প্রতি তার স্ত্রীকে পরিচালক থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

জানা যায়, ২০১৩ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এনআরবিসি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। বিভিন্ন দেশে বসবাসরত আওয়ামী লীগ নেতারা ছিলেন ব্যাংকটির মূল উদ্যোক্তা। ফরাসত আলী ছিলেন এনআরবিসি ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান। ব্যাংকটির যাত্রা শুরুর পর বড় ধরনের আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়ে। এরপর ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। ফরাসত আলীর বদলে নতুন চেয়ারম্যান হন তমাল পারভেজ। আর ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমানকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই বছর পরিচালক পদ থেকে বাদ পড়েন তৌফিক রহমান চৌধুরী। আর সরোয়ার জামান চৌধুরীর বাদ পড়েন পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার আরও আগে। এই তিনজনের বিরুদ্ধেই ছিল ব্যাংকটিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

এই তিনজনকে নতুন করে পরিচালক করার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন করে তিনজন উদ্যোক্তাকে পরিচালক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়া গেলেই তাঁদের নিয়োগ চূড়ান্ত হবে। দ্রুতই পর্ষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন চেয়ে আমরা চিঠি পাঠাব।’