ব্যাংকের সব শাখায় ছেঁড়া–ময়লা টাকা নেওয়ার নির্দেশ

বাংলাদেশ ব্যাংকছবি: সংগৃহীত

তফসিলি ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা ব্যাংক নোট বা টাকা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ‘ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা নোট গ্রহণ করা হয়’ এমন বিজ্ঞপ্তি শাখার দৃশ্যমান স্থানে ও রঙিন অক্ষরে লিখে টানানোর জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ–সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়, ২০১৩ সালে এ–সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। ওই পরিপত্রে বলা হয়—ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় সহজে জনসাধারণের দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে ‘ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা নোট গ্রহণ করা হয়’ এমন বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শন করতে হবে এবং এ–সংক্রান্ত সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, এই নির্দেশনা ব্যাংকের সব শাখা মানছে না। ফলে জনসাধারণ তফসিলি ব্যাংকের শাখাগুলো থেকে ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা নোট বিনিময়–সংক্রান্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ জন্য ব্যাংকের সব শাখায় ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা নোট–সংক্রান্ত সেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও নির্দেশনা দিয়েছে।

পরিপত্রে বলা হয়, ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় আবশ্যিকভাবে কাউন্টারের সামনে বা জনসাধারণের সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে ২০ ফন্টে রঙিন কালিতে লিখিত বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শন করতে হবে।

টাকা বা নোট ছিঁড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ—টাকায় পিন মারা। পৃথিবীর খুব কম দেশের কাগুজে মুদ্রা অনেক পুরোনো হলেও সেগুলো ছেঁড়া-ফাটা বা তাতে পিন মারার চিহ্ন থাকে না। কিন্তু বাংলাদেশে এমনকি নতুন টাকায়ও পিন মারার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়।

আগে একসময় ‘ভোমর’ দিয়ে ছিদ্র করে সুতা দিয়ে টাকার বান্ডিল বাঁধার প্রচলন ছিল। তবে এখন ব্যবসায়ী, ব্যক্তি পর্যায় কিংবা বাণিজ্যিক ব্যাংকে প্রায়ই টাকার বান্ডিলে পিন মারা হয়। টাকায় পিন না মারার বিষয়ে যে বিধিনিষেধ আছে, সে ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণাও তেমন চোখে পড়ে না।

টাকার ক্ষতি হয় যেভাবে

ব্যাংকারদের দাবি, বড় অঙ্কের টাকা উত্তোলনের পরে গ্রাহকের চাহিদামতো নোটগুলো ভালোভাবে সাজিয়ে দিতে পিন মারা হয়। নোটের এক মাথায় পিন মারার ফলে টাকা গুনতেও সুবিধা হয়। আবার গ্রাহক টাকা গোনার সময় কৌশলে যাতে টাকা না সরাতে পারে, সে জন্য পিন ব্যবহার করা হয়।

এই পিন মারার ফলে টাকার বেশি ক্ষতি হয়। আবার পিন মারা বা স্ট্যাপলিং করার জন্য ব্যাংক বিভিন্ন ব্রাঞ্চে বড় মেশিনও রাখে। অন্যদিকে পিন মারার ফলে ব্যাংক নোটের স্থায়িত্ব কমে যায়। এতে খরচ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে টাকা ছাপাতে প্রতিবছর খরচ করতে হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকা।

মুদ্রা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, একটি ব্যাংক নোট যদি প্রতিদিন হাতবদল হয়, তাহলে সেটি পাঁচ থেকে ছয় বছর প্রচলনযোগ্য বা ভালো অবস্থায় থাকে।

টাকায় পিনের বিকল্প কী

ব্যাংক নোট সংরক্ষণের জন্য পিনের বিকল্প হিসেবে আছে কাগজের ব্যান্ডিং। কাগুজে একধরনের টেপের ব্যবহারও হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এভাবে কাগুজে মুদ্রার বান্ডিল করা হয়। এ ছাড়া রাবার দিয়ে টাকার বান্ডিল করার পুরোনো পদ্ধতিও নিরাপদ।

পিনের বিকল্প এসব কাগজ অথবা কাগুজে টেপের ব্যবহার করতে হলে দরকার হয় বিশেষ মেশিনের। এই মেশিন বড় ব্যাংকের করপোরেট শাখা বা তুলনামূলক আধুনিক সুবিধা আছে এমন শাখায় দেখা যায়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শাখা-উপশাখায় এখনো এই মেশিন নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র।