প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম আবারও বাড়ল
এক মাসের ব্যবধানে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম আবারও বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে রপ্তানিকারকেরা রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম পাবেন ১০৭ টাকা, আগে যা ছিল ১০৬ টাকা। আর প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা। আগে এ দাম ছিল ১০৮ টাকা।
ডলারের নতুন দামের এ সিদ্ধান্ত আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে।
আজ বুধবার ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা এক অনলাইন সভায় ডলারের দাম আরেক দফা বাড়াতে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নেন।
নতুন দাম নির্ধারণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন ডলারের দামের ব্যবধানও কমে আসছে। ধীরে ধীরে দাম বাজারের সমান করা হবে।’
নতুন সিদ্ধান্তের ফলে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ডলারের দাম পড়বে ১০৮ টাকা। তবে ব্যাংকে যেহেতু ডলারের সংকট রয়েছে, তাই অনেক ব্যাংক ১১০ টাকার চেয়ে বেশি দামে আমদানির ঋণপত্র খুলছে। অন্যদিকে কিছু ব্যাংক প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কিনছে ঘোষণার চেয়ে বেশি দামে। ফলে ডলারের নতুন দাম নির্ধারণের ফলে সংকট কতটা কাটবে, সে ব্যাপারে ব্যাংকাররা নিশ্চিত নন।
জানা গেছে, হুন্ডিতে বা অবৈধ পথে আসা ডলারের দাম প্রায় ১১০ টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো ঘোষিত দামের চেয়ে ডলারের দাম বেশি দিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাস্তির মুখে পড়তে হয়। এ কারণে ব্যাংকগুলো বেশি দাম দিয়ে প্রবাসী আয় আনতে পারে না। সে কারণে বৈধ পথে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমছে বলে অনেক ব্যাংকার মনে করেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এর পর থেকে এই দুই সংগঠন মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার-সংকট আগে যতটা প্রকট ছিল, তা এখন অনেকটা কমে এসেছে। তবে আমদানি ঋণপত্র খোলা কমে গেছে। এতে ব্যাংকগুলোতে ডলারের মজুত কিছুটা বেড়েছে। তবে সংকট এখনো কাটেনি।
এদিকে ডলারের নতুন দাম নির্ধারণবিষয়ক এবিবি ও বাফেদার সভায় অংশ নেওয়া একাধিক ব্যাংকার জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে সব ক্ষেত্রে ডলারের এক দাম নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া দেশের ঋণমান বা রেটিং কমিয়ে দিয়েছে মুডিস। এর জন্য ডলারের ভিন্ন ভিন্ন দামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য ডলারের দাম ধীরে ধীরে বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে। এর কোনো বিকল্প আর নেই।