কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণের টাকা ছাড় করাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাব থেকে টাকা ছাড় করা হচ্ছে। তাই ঋণে অনিয়ম করেও অনেকে আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। কারণ, এসব চেকের লেনদেন খতিয়ে দেখা হয় না। সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে একটি চিঠি দিয়েছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেখা গেছে যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করে ঋণগ্রহীতা বা তাদের মনোনীত প্রতিষ্ঠান কিংবা সরবরাহকারীকে ঋণ/লিজ/বিনিয়োগের অর্থ ছাড় করছে, যা বিধিসম্মত নয়। এই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করে কোনো ঋণগ্রহীতা বা তাদের নির্বাচিত ও মনোনীত প্রতিষ্ঠান কিংবা সরবরাহকারীকে ঋণ/লিজ/বিনিয়োগের অর্থ ছাড় না করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।
প্রসঙ্গত, প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরুর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে চলতি হিসাব খোলে। এই হিসাবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনমতো টাকা জমা রাখে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করলে এই হিসাব থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়েছে, আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব অর্থ বের করেছিলেন, তার অনেক ঘটনাই সংঘটিত হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করে। অনেক ব্যাংকও একই কায়দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের চেক ব্যবহার করে গ্রাহকদের অর্থ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চেকের বিপরীতে কোনো ধরনের সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয় যাচাই করা হয় না। ফলে প্রকৃত দোষীরা আড়ালে থেকে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, অনিয়মের মাধ্যমে যেসব ঋণ বিতরণ হয়, তার প্রকৃত সুবিধাভোগীদের গোপন করতে অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়ে আসছে। বিষয়টি নজরে আসার পরই তা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ রকম ফাঁকফোকর বন্ধে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে।
বর্তমানে দেশে ব্যাংকবহির্ভূত ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১০টির অবস্থা খুব খারাপ। এসব প্রতিষ্ঠান সময়মতো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। যাঁদের নামে ঋণ গেছে, তাঁদের অনেককে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটে পড়েছে।