২০৩৫ সালে অর্থবিত্ত-জনসংখ্যায় শীর্ষ শহরে ঢাকাও থাকবে
আধুনিক অর্থনীতির চালিকাশক্তি হচ্ছে শহর। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ এখন শহরে বাস করছে। নগরায়ণ প্রক্রিয়া এখন বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গতিপথ অভূতপূর্ব উপায়ে বদলে ফেলছে। অবশ্য, এখনকার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ শহরের চেয়ে অনেকটাই আলাদা হয়ে দাঁড়াবে।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের অনেক শহরের চেহারা বদলে যাবে। অর্থনীতির আকার, জনসংখ্যা ও মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারের ওপর ভিত্তি করে অক্সফোর্ড ইকোনমিকস শীর্ষ ১০টি শহরের তালিকা করেছে। এ তিনটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পৃথক ১০টি করে শহরের তালিকা তুলে ধরেছে উইফোরাম ডটওআরজি।
২০৩৫ সাল নাগাদ ১০টি শহরের মোট জিডিপি বিস্তৃত হবে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগো শহর রয়েছে। শক্তিশালী ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের জন্য নিউইয়র্ক শহরের জিডিপি দাঁড়াবে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। তালিকায় চারটি শহর চীনের। সাংহাই, বেইজিং, গুয়াংজু ও শেনঝেন শহর জিডিপির হিসাবে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি শহরের তালিকায় থাকবে। ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে টোকিও শহর। চলতি বছরে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন জিডিপি নিয়ে বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ শহর টোকিও। শীর্ষ শহর হিসেবে তালিকায় চারে থাকবে লন্ডন, সাতে প্যারিস আর আটে থাকবে শিকাগো।
জনসংখ্যার ভিত্তিতে শহরের হিসাব ধরলে বিশ্বের একটি স্বতন্ত্র বণ্টন দেখা যায়। ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের সবচেয়ে জনসংখ্যাবহুল শহরগুলো কিছুটা পূর্ব দিকে সরে যাবে। এর মধ্যে প্রায় ৭টি শহর হবে এশিয়ার। এ তালিকায় আমাদের ঢাকা শহর ওপরের দিকেই থাকবে। ২০৩৫ সাল নাগাদ জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান হবে চতুর্থ। এ তালিকায় ৩ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে শীর্ষে থাকবে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। এরপরই থাকবে টোকিও। তালিকার তৃতীয় অবস্থানে চলে আসবে চীনের চংকিন শহর। ঢাকার পরের অবস্থানে চলে আসবে করাচি, কিংসা, লাগোস, মেক্সিকো সিটি ও মুম্বাই। উইফোরামের প্রতিবেদন বলছে, ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকার জনসংখ্যা হতে পারে ৩ কোটি ১২ লাখ।
বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব করলে ২০৩৫ সাল নাগাদ শীর্ষ শহর হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসবে ঢাকা। ওই সময় ঢাকার জিডিপি হতে পারে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ঢাকার চেয়ে কিছুটা বেশি জিডিপি হতে পারে ভারতের বেঙ্গালুরুর। ওই সময়ে ভারতের শহরটির জিডিপির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলেছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হিসাব করলে কতগুলো শহরকে আলাদাভাবে দেখতে হবে। যেখানে সাধারণ শহরগুলোর জিডিপি ২ দশমিক ৬ শতাংশের মতো, সেখানে শীর্ষ ১০ শহরের জিডিপির গতি অনেক বেশি। দ্রুতগতির জিডিপির কারণে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা শহরগুলোর সবই এশিয়াকেন্দ্রিক হবে। এর মধ্যে চারটি হবে চীনের। তিনটি হবে ভারতের। এর বাইরে স্থান পাবে ঢাকা, জাকার্তা ও ফিলিপাইনের ম্যানিলা।
২০৩৫ সালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বেঙ্গালুরুর উচ্চমানসম্পন্ন দক্ষ কর্মীর ও প্রযুক্তি স্টার্টআপগুলোর কারণে তাদের জিডিপির গতি বেশি থাকবে। জনসংখ্যার হিসাবে শীর্ষ ১০-এর তালিকায় থাকা জাকার্তা দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধির তালিকাতেও রয়েছে। ভারতের বেঙ্গালুরুর পাশাপাশি ৬ দশমিক ৬ ও সাড়ে ৬ শতাংশ জিডিপির গতি নিয়ে ঢাকার পরেই থাকবে মুম্বাই ও দিল্লি। ৫ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপির গতি নিয়ে এরপর থাকবে চীনের শেনঝেন। এরপর থাকবে জাকার্তা, ম্যানিলা, তিয়ানজিন, সাংহাই ও চংকিং।
তিন ধরনের তালিকায়ও জায়গা পেয়েছে চীনের সাংহাই শহর। দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত শহরটিতে বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দর, চীনের স্টক এক্সচেঞ্জের মতো জায়গা রয়েছে। এসব কারণে সাংহাইয়ের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে পৌঁছাবে।
অবশ্য, ২০৩৫ সাল নাগাদ এসব পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে আর্থিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দ্রুত নগরায়ণ ও প্রযুক্তিগত উন্নতির মতো কোনো বিষয় পরিবর্তন হলে এর প্রভাব শহরগুলোর ওপর পড়তে পারে।