>আজাদ জুতা ময়মনসিংহ অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। একনামেই চেনে সবাই। প্রায় ৫০ বছর ধরে ব্যবসা করছে তারা। জুতার পাশাপাশি এখন অন্য ব্যবসায়ও মনোযোগ দিয়েছেন আজাদ ফুটওয়্যারের অন্যতম কর্ণধার মো. আশরাফ হোসাইন। ময়মনসিংহের ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে তিনি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সানাউল্লাহ সাকিব ও কামরান পারভেজ।
প্রথম আলো: ব্রিটিশ আমল থেকে ময়মনসিংহে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে আসছে। এখন পরিস্থিতি কেমন?
আশরাফ হোসাইন: খুব ভালো বলা যাবে না, তবে মোটামুটি চলে যাচ্ছে। এখানে সবচেয়ে বেশি হলো ট্রেডিং ব্যবসা। উৎপাদনশীল ব্যবসা তেমন একটা নেই। ইটভাটা, অটো রাইস মিল কিছু রয়েছে। নিজস্ব ব্র্যান্ড বলতে ময়মনসিংহের মধ্যে আমাদের আজাদ জুতা। আবার রাজধানীর ইনফিনিটি সুপারশপের মালিক এখানকার। তবে সেটা রাজধানীকেন্দ্রিক। এখানে ভালো সবজি উৎপাদিত হয়। সারা দেশের ৩০ শতাংশ সবজি যায় ময়মনসিংহ সদরের বুরোরচর থেকে। ময়মনসিংহ থেকে জামালপুর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের দুধারেই বেশি সবজি চাষ হয়। এদিকে তুরস্ক এখানে ১২ বছর আগে একটা কার্পেট কারখানা করেছে, এখন রপ্তানিও হচ্ছে। এ শহরে শিক্ষিত মানুষের কর্মসংস্থানের কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। শিল্পকারখানার চেয়ে ট্রেডিং ব্যবসার প্রতিই এখানকার ব্যবসায়ীদের বেশি আগ্রহ।
প্রথম আলো: ময়মনসিংহে প্রচুর মাছ চাষ হচ্ছে, মুরগির খামারও হয়েছে। সেগুলো কেমন চলছে। কর্মসংস্থানে এসব খামারের প্রভাব কেমন?
আশরাফ হোসাইন: ভালুকা, ত্রিশাল ও গফরগাঁওয়ে অনেক হ্যাচারি ও মাছ চাষ হচ্ছে। তবে দুর্গন্ধের কারণে হ্যাচারি কমে আসছে বলে শুনেছি। আর ত্রিশাল ও ভালুকা এখন পুরোপুরি শিল্প এলাকা। এসবের কারণে ওই এলাকাগুলোতে স্বল্প আয়ের মানুষের ভালো কর্মসংস্থান হয়েছে। ময়মনসিংহ শহরেরও অনেকে এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তবে এর কোনো প্রভাব ময়মনসিংহ শহরে নেই।
প্রথম আলো: অনেক পুরোনো শহর, এরপরও কেন ময়মনসিংহে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটল না?
আশরাফ হোসাইন: ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরত্ব হওয়ায় এখানে কেউ ব্যবসায় মনোযোগ দেননি। যাঁরা ব্যবসা করতে চেয়েছেন, তাঁরা ঢাকায় করেছেন। কেউ শিল্প করতে চাইলে ভালুকার দিকে গেছেন। কারণ, ঢাকার কাছে। তবে মানুষের চাহিদার প্রয়োজনে শহরে ট্রেডিং ব্যবসা বাড়ছে। পাঁচ বছর আগে শহর যতটা ছিল, এখন তার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে এ শহরে হঠাৎ অনেক মানুষ বসবাস শুরু করেছে। আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে অনেকেই শহরে চলে এসেছে। শিক্ষা, চিকিৎসার কাজে আরও অনেকে আসছে। আর আগে থেকেই শহরের সড়কগুলো বেশ ছোট। এরপরও বড় সমস্যা ফুটপাত দখল। ফলে শহরটা বসবাসের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। ফুটপাত দখল ও যানজট এখন এ শহরের প্রধান সমস্যা।
প্রথম আলো: এ জেলায় নতুন উদ্যোক্তা কেমন গড়ে উঠছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান সমস্যা কী?
আশরাফ হোসাইন: শিল্পকারখানা যা হচ্ছে, তার সবই ভালুকা ও ত্রিশালে। তবে এর গতিও অনেক কমে গেছে। কারণ, ওসব এলাকায় জমির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। নতুন কিছু করতে জমি পাওয়া যাচ্ছে না। ময়মনসিংহে যে বিসিক শিল্পনগরী আছে, তা ছোট এবং অব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছেন। কেউ কারখানা করছেন না, জমিও ছাড়ছেন না। নামমাত্র কেউ কয়েল, মুড়ির কারখানা করে জমি দখল করে রেখেছেন। অথচ আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা জমি পাচ্ছেন না। মুক্তাগাছার পুরো বিসিক এলাকা দখল করে রেখেছে একটা গ্রুপ, কোনো কারখানা করছে না। জামালপুরে ইপিজেডসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আরও বিভিন্ন জায়গায় অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে। কিন্তু ময়মনসিংহের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। এ ছাড়া ব্যাংকঋণের সুদহার অনেক বেশি। আমার ঋণেও ১৪ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। মধ্যে ৬ মাস ১১ শতাংশ সুদ ছিল। যাদের টাকা আছে, ব্যাংকগুলো তাদেরই বেশি ঋণ দিচ্ছে।