বাণিজ্যের সুযোগ খুঁজতে হবে অন্যান্য জোটেও

শেখ ফজলে ফাহিম সভাপতি, এফবিসিসিআই
শেখ ফজলে ফাহিম সভাপতি, এফবিসিসিআই
>

ঢাকায় গত মঙ্গল ও বুধবার অনুষ্ঠিত হলো এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর জোট দ্য কনফেডারেশন অব এশিয়া-প্যাসিফিক চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিএসিসিআই) সম্মেলন। যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)। সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ কী পেল, তা নিয়ে প্রথম আলো সঙ্গে কথা বলেছেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ

প্রথম আলো: দুই দিনের সম্মেলন তো শেষ হলো, এর সুফল বাংলাদেশ কী পাবে?

ফজলে ফাহিম: গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন দেশের সরকারি পর্যায়ে জানা আছে। বেসরকারি খাত বিষয়টি ততটা ওয়াকিবহাল নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১০০টির মতো ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সম্পর্ক রয়েছে। সিএসিসিআইয়ের মতো সংগঠনগুলোরও সদস্য এফবিসিসিআই। আমরা চাই এসব সংগঠনে এফবিসিসিআইয়ের কার্যক্রম বাড়াতে। সুযোগ পেলেই বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের জানাতে চেষ্টা করি। একাধিক দেশ নিয়ে ব্যবসায়িক সম্মেলন আয়োজনের ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি ছিল। সেটা পূরণের লক্ষ্য নিয়েই এই সম্মেলনের আয়োজন। কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসতে চাননি। কারণ, সংশ্লিষ্ট দেশ বাংলাদেশ নিয়ে ভ্রমণ–সতর্কতা জারি রেখেছে। আমরা বললাম, কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী আসছেন, বিশ্বব্যাংক–প্রধান আসছেন, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদল আসছে; সেখানে চেম্বার নেতারা না আসার কোনো কারণ নেই।

প্রথম আলো: এই সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটুকু আগ্রহী?

ফজলে ফাহিম: আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে ওভাবে জানতেন না। আসার পরে যা দেখছেন, তা অনেকেরই অভিজ্ঞতার বাইরে ছিল। এ দেশে এসে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও পরিস্থিতি দেখে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, এখানে ব্যবসা-বিনিয়োগের সুযোগ আছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের সংযোগ হলে সচেতনতা বাড়ে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে। বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের সুযোগ বাড়বে।

প্রথম আলো: আপনারা আগামী বছর আরও কিছু সম্মেলন আয়োজনের কথা বলছেন।

ফজলে ফাহিম: আগামী বছর ডি-৮ (উন্নয়নশীল ৮ দেশের জোট) চেম্বারের সম্মেলন ঢাকায় হবে। এ ছাড়া আমরা আগামী বছর ঢাকায় কমনওয়েলথ এশিয়া বিজনেস ফোরাম আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছি। চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ নিয়ে দক্ষিণ-এশিয়া বিজনেস ফোরাম করার চিন্তা আছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় বাংলাদেশ এক্সপো করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের প্রচলিত পণ্য ছাড়াও অপ্রচলিত পণ্য তুলে ধরা হবে। যেখানে বিদেশি ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসা হবে।

প্রথম আলো: এফবিসিসিআইকে আমরা আগে এ ধরনের সম্মেলন আয়োজনে এত জোর দিতে দেখিনি। এখন কেন?

ফজলে ফাহিম: এফবিসিসিআইয়ের কাজ হলো বাণিজ্য সম্প্রসারণ। সদস্য ৫০০ সংগঠনের কাজে এফবিসিসিআইয়ের যাওয়াটা ঠিক নয়, প্রয়োজন না হলে। বাণিজ্য সম্প্রসারণে সরকার যা করছে, সেটা ঠিক আছে। পাশাপাশি এফবিসিসিআইয়ের ভূমিকা নিতে হবে। ক্ষুদ্র শিল্প, মাঝারি শিল্প এবং বড় শিল্পের সঙ্গে যে মাঝারি শিল্প থাকে, তাদের এগিয়ে নেওয়া এফবিসিসিআইয়ের দায়িত্ব। এ জন্যই সংযোগ তৈরিতে এসব কাজ।

প্রথম আলো: সম্মেলনে আসা ব্যবসায়ীরা কোন খাতে আগ্রহ দেখিয়েছেন?

ফজলে ফাহিম: একেকটি দেশের সক্ষমতা একেক রকম। জাপানের বিনিয়োগকারীদের জ্বালানি ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগের সক্ষমতা বেশি। তাইওয়ান থেকে কেউ হয়তো স্মার্ট কৃষি নিয়ে কথা বলছে। কোরিয়া যেমন প্রশিক্ষিত নার্স চায়। আমি তিন মাস আগে কানাডায় গিয়েছিলাম, তারাও নার্স চায়। একেক দেশের আগ্রহ একেক রকম। এ ধরনের সম্মেলনে আমরা আগ্রহ বুঝে ব্যবসার সুযোগ তৈরি করতে পারি। আমরা এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সমিতিকে যুক্ত করতে চাই।

প্রথম আলো: বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমিতিগুলো কি ততটা সক্ষম?

ফজলে ফাহিম: আমরা চাই, সমঝোতা এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে হোক। আমাদের সদস্যদের কোনো ঘাটতি দেখলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা চাই পুরো ‘ইকোসিস্টেম’ তৈরি করতে। ধরেন, কানাডার সঙ্গে নার্স প্রশিক্ষণের জন্য সমঝোতা করেছি, সেখানে বলেছি এ দেশে প্রশিক্ষক তৈরি করতে। যাতে পরে এদেশীয় প্রশিক্ষকেরাই নার্স প্রশিক্ষণ দিতে পারে। শুধু একটি কোর্স প্রস্তাব করলাম, তা নয়।

প্রথম আলো: এই অঞ্চলের দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে কী করার আছে?

ফজলে ফাহিম: দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য খুবই কম। আমরা এখন পর্যন্ত এমন কিছু দেখছি না, যাতে আশা করার কিছু আছে। তবে আমরা কাজ করছি। এর মধ্যে একটি হলো, একটি ফোরাম আছে যেখানে ভারতের কিছু বড় ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী বিনিয়োগ-ব্যবসার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্ভাবনা আছে। সে দেশের পোশাক খাত ও বাংলাদেশের পোশাক খাত একসঙ্গে কাজ করতে পারে। উচ্চমূল্যের পোশাক বাংলাদেশে তৈরি হয়ে শ্রীলঙ্কায় ফিনিশিংয়ের কাজ হবে, এতে রপ্তানি বাড়বে। তবে শুধু সার্কের মধ্যে থাকলে হবে না, বিমসটেক (আঞ্চলিক সাত দেশের জোট), বিবিআইএনের (চার দেশীয় আন্তযোগাযোগ উদ্যোগ) মতো কোনো জোটে বাণিজ্যের সুযোগ থাকলে সেটাও ধরার চেষ্টা করতে হবে।