প্রভাব পড়বে ক্রেতার ওপর
>বাজেটে বাড়তি কর আরোপের কারণে রড-সিমেন্টের দাম বেড়েছে। তাতে ফ্ল্যাট নির্মাণের খরচ বাড়বে। এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠান বিটিআইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ আর খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শুভংকর কর্মকার।
প্রথম আলো: বাজেটে বাড়তি কর আরোপের কারণে বাজারে ইতিমধ্যে রড-সিমেন্টের দাম বেড়েছে। এতে আবাসন খাতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে?
এফ আর খান: দশতলা একটি ভবন নির্মাণের মোট খরচের ১৩ শতাংশ রড ও ৭ শতাংশ সিমেন্টে পেছনে যায়। তার মানে ভবন নির্মাণের ২০ শতাংশ খরচ রড-সিমেন্টে। বাজেটে বাড়তি করারোপের কারণে এখন পর্যন্ত রডের দাম ৫ শতাংশ ও সিমেন্টের দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে। তাতে ভবন নির্মাণে সামগ্রিক খরচ বেড়ে যাবে ২ শতাংশের মতো। তাতে দুই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের দাম চার লাখ থেকে ছয় লাখ পর্যন্ত বাড়বে। এতে সাধারণ ক্রেতাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা আবাসন খাতকে আবার মন্থর করে দিতে পারে।
প্রথম আলো: সরকার সাধারণ মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারছে না। স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থাও অপ্রতুল। উল্টো নির্মাণসামগ্রীর ওপর করের হার বাড়ানো হয়েছে। আবাসন নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত কেন সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী হচ্ছে?
এফ আর খান: এ ক্ষেত্রে আমাদের (আবাসন ব্যবসায়ী) ভুল আছে। আমরা সরকারকে সঠিকভাবে বোঝাতে পারিনি। আবার সরকারেরও দায় আছে। সহজে রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন খাতের ওপর কর বৃদ্ধি করে দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু তাতে কী প্রভাব পড়বে, অনেক সময়ই সেটি দেখা হয় না।
প্রথম আলো: বাজেটের আগে নিবন্ধন খরচ কমানো নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত আশ্বাসই শুধু মিলেছে। নিবন্ধন ব্যয় কমালে কী প্রভাব পড়বে?
এফ আর খান: নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কমানো হলে অবশ্যই সরকারের রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে। কারণ, আমি মনে করি, ১০-১৫ বছর ধরে নিজের ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন অথচ রেজিস্ট্রেশন করেননি, এমন অনেকেই আছেন। ১৯৯৫ সালে রেজিস্ট্রেশনে ব্যয় কমানো হয়েছিল। তখন অনেক রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল। বাজেটের আগে আমরা আশা করেছিলাম, নিবন্ধন ব্যয় এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসবে। তবে শেষ পর্যন্ত কেবল আশ্বাস মিলেছে।
প্রথম আলো: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিবন্ধনের সময় ফ্ল্যাটের দাম প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে কম দেখানো হয়। তাহলে নিবন্ধন ব্যয় কমালে রাজস্ব কীভাবে বাড়বে?
এফ আর খান: রাজস্ব অবশ্যই বাড়বে। কারণ, অনেক ফ্ল্যাটই নিবন্ধনবিহীন রয়েছে। নিবন্ধনের সময় ফ্ল্যাটের দাম প্রকৃত বাজারমূল্যের চেয়ে কম দেখানোর বিষয়টি সত্য। সরকার চাইলে এলাকাভিত্তিক ফ্ল্যাটের ন্যূনতম মূল্য সামান্য বাড়াতে পারে। তবে বেশি বাড়ালে কোনো লাভ হবে না।
প্রথম আলো: বাজেটে আবাসন খাতে বিনা প্রশ্নে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে আবাসন খাত কি চাঙা হবে?
এফ আর খান: আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ খুব বেশি আসে না। এনবিআর অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন না করলেও অন্য সংস্থা করতে পারে। সে জন্য ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।