বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হিসাব মেলানো কঠিন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যে হিসাব দিয়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ। অবশ্য এর পেছনে তিন ধরনের যুক্তি আছে। প্রথমত, বাজেট ঘোষণার সময় প্রবৃদ্ধির সাময়িক হিসাবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ বলা হয়েছে। তখন আট-নয় মাসের তথ্যের ভিত্তিতে এই সাময়িক হিসাবটি দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। এটি ছিল চার মাস আগে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে পুরো অর্থবছরের একটি সাময়িক হিসাব। এখন জুন মাস পর্যন্ত প্রায় সব খাতের হিসাব প্রকাশিত হয়েছে। ওয়েবসাইটেই প্রকাশ করা হয়েছে। তাহলে আগস্ট মাসে এসে এখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাময়িক হিসাব দিল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। আগের প্রবৃদ্ধির হিসাবও বদলায়নি বিবিএস। এটা কীভাবে সম্ভব? হতে পারে, বিবিএস জুন মাস পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্যগুলো আমলে নেয়নি।
দ্বিতীয় অসংগতি হলো শিল্প উৎপাদনের হিসাবও মেলে না। শিল্প উৎপাদনের সিংহভাগ আসে মূলত বড় ও মাঝারি শিল্পকারখানা থেকে। কিন্তু বিবিএস বলছে, রপ্তানি কমেছে ৯ শতাংশ। অথচ বড় ও মাঝারি শিল্পকারখানাগুলোই ৯৫ শতাংশ রপ্তানি করে থাকে। আবার অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদাও করোনার কারণে ব্যাপক কমেছে। দেশের বাজারের জন্য বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য বানায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমেছে, বেচাকেনাও কমেছে। তাহলে শিল্প খাতের বড় ও মাঝারি শিল্পোৎপাদনে কীভাবে সাড়ে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলো? বিবিএসের হিসাবটি বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। রপ্তানি হ্রাস এবং অভ্যন্তরীণ বাজারের বাস্তব চাহিদার সঙ্গে বিবিএসের তথ্যের মিল নেই।
করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেবা খাত। পরিবহন, পর্যটন, হোটেল-রেস্তোরাঁ সবই বন্ধ ছিল। বহু লোক বেকার বসে ছিল। বিবিএস বলছে, এসব খাতে জিডিপিতে আগের চেয়ে অবদান বেড়েছে। তাহলে কি করোনার আগের ৯ মাস এসব খাত ব্যাপকভাবে চাঙা ছিল। ওই সময়ে যদি ওই খাতে ১০-১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, তাহলে করোনাকালের এক মাস ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে সেই প্রবৃদ্ধি ‘নেই’ হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ এসব খাতে প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে বিবিএস। এটিও বেশ প্রশ্নবিদ্ধ হিসাব।