দুর্নীতি থাকলেই সবকিছু অচল হয়ে যায় না: অভিজিৎ ব্যানার্জি
অর্থনীতিতে সদ্য নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, দুর্নীতি থাকলেই পরিবর্তন আটকে থাকে না। একটি দেশে দুর্নীতি থাকলেই সবকিছু অচল বা অকেজো হয়ে যায় না বলে তিনি মনে করেন।
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেন, দুর্নীতির ভেতরেও অনেক কিছু হয়, পরিবর্তন হয়। যে দেশে দুর্নীতি আছে, সে দেশে পরিবর্তন আটকে থাকে না। তিনি বলেন, ‘লোকেরা যাঁরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকে, তাঁদেরও ভোটে জেতার আশা থাকে।’ ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর উদাহরণ টেনে অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনি ‘বিখ্যাত দুর্নীতিগ্রস্ত প্রেসিডেন্ট’ ছিলেন বলে নানা লোকে বলে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় সবার জন্য স্কুল এবং অপুষ্টি দূর করার ওপর তিনি জোর দিয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কোনো একটি বিষয় দারিদ্র্য বিমোচনকে আটকে রাখে না। এমন এক সময় তিনি বিবিসিকে সাক্ষাৎকারটি দিলেন, যখন (বৃহস্পতিবার) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন দিবস। দারিদ্র্য বিমোচনে অনেক সমাধান দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত।
অর্থনীতিতে এবার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আরও যে দুজন নোবেল পুরস্কার জিতেছেন, তাঁদের একজন হলেন তাঁর ফরাসি স্ত্রী এস্থার দুফলো, অন্যজন মাইকেল ক্রেমার।
পুরস্কার পাওয়ার পরে এস্থার দুফলো বলেন, গত ৩০ বছরে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে দুটি গ্রুপ খুবই লাভবান হয়েছে। এর একটি অংশ হচ্ছে অতিধনী, অপর অংশটি হচ্ছে অতিদরিদ্র। তার অর্থ কি মধ্যবিত্তরা মার খাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে অভিজিৎ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘হ্যাঁ, তারা মার খেয়েছে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে আমরা থাকি, সেখানে মধ্যবিত্তরা মার খেয়েছে। দরিদ্ররাও মার খেয়েছে। মার্কিন দেশে যারা দরিদ্র, তারা পৃথিবীতে মধ্যবিত্ত। তারাও মার খেয়েছে।’
এই বাঙালি অর্থনীতিবিদ মনে করেন, যারা মার খায়নি, তারা হচ্ছে পৃথিবীর দরিদ্র দেশগুলোর দরিদ্র লোকেরা। যেমন ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীন—এসব দেশের দরিদ্রদের উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর নতুন ধন-সম্পদ সব ধনীদের কাছে যাচ্ছে। সেখান থেকে দুই-চার ফোঁটা যেগুলো ছিটকে যাচ্ছে, সেগুলোও যদি গরিবেরা পায়, তাতেই তারা এগিয়ে যেতে পারে। কারণ, তারা এতটাই দরিদ্র যে সে দুই-চার ফোঁটাও তাদের কাজে লাগছে।
দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাকের প্রসঙ্গ তোলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘ব্র্যাকের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে দারিদ্র্য একক সমস্যা নয়, এটা বহুমাত্রিক সমস্যা। কিছু প্রকল্প আছে, যার মাধ্যমে অতিদরিদ্রদের জন্য কাজ করা যায়। স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ ব্র্যাকের অনেক আলাদা ধরনের কর্মসূচি রয়েছে। তাদের ধারণা আমাদের মতোই। নানা সমস্যার নানা সমাধান আছে।’
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিন্তা হচ্ছে, দরিদ্রদের উন্নয়নের জন্য পাওয়া অর্থ যাতে ঠিকমতো খরচ করা হয় এবং কোন রাজনৈতিক দল সেটি করছে, তা মুখ্য বিষয় নয়। তাঁর মতে, দারিদ্র্য নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলেন। আবার অনেকে ভুলও বলেন। দারিদ্র্য বিষয়ে তত্ত্বের ভেতরে না থেকে হাতেকলমে তিনি দেখিয়েছেন যে দারিদ্র্যের চেহারাটা কেমন এবং সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় কী। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে বসে চোখ বন্ধ করে এবং তত্ত্ব বের না করে লোকেরা যা করছে, সেটা দেখে তার ভেতর থেকে তত্ত্বটা বের করেছি।’