রিজার্ভ বৃদ্ধি, কর-জিডিপি বৃদ্ধি ও ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বহু বছর ধরেই আমরা বলে আসছি। কিন্তু তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। এখন আইএমএফ বলছে এসব কথা।
তবে এমনি এমনি বলছে না। ঋণ দেওয়ার বিপরীতে শর্ত দিয়েই বলছে। তাতেও দেখা যাচ্ছে, কাজ হচ্ছে কমই। মূল সমস্যা কোথায় এখন খুঁজতে হবে। আর শুধু রিজার্ভ, কর-জিডিপি ও ভর্তুকি লক্ষ্যমাত্রা নয়, মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়েও আইএমএফের মিশন অখুশি বলে মনে হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি কমাতে আমরা কী পদক্ষেপ নিয়েছি? রিজার্ভ বাড়াতেই–বা কী করেছি? সমস্যা তো গোড়ায়, সেটা হচ্ছে নীতির (পলিসি) সমস্যা। সবার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি বদলাতে হবে। বিদ্যমান নীতি দিয়ে যে হবে না, আগেও বলেছি, আবারও বলছি।
মুদ্রা বিনিময়ের হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। কী হবে তা করলে? বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ডলার বিক্রি বন্ধ করে দেয়, কী হবে তাতে? ডলারের দামটা একটু বাড়বে, এই তো? বেড়ে তো একসময় ঠিকও হয়ে যাবে। বাজারভিত্তিক না করলে এ বাজারের রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে না।
এক নম্বরে হচ্ছে মুদ্রা বিনিময়ের হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। কী হবে তা করলে? বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ডলার বিক্রি বন্ধ করে দেয়, কী হবে তাতে? ডলারের দামটা একটু বাড়বে, এই তো? বেড়ে তো একসময় ঠিকও হয়ে যাবে। বাজারভিত্তিক না করলে এ বাজারের রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে না। অথচ আমরা দেখছি, নীতি সমস্যার কারণে রিজার্ভ বৃদ্ধি না হয়ে বরং কমছে। সরকারি হিসাবেই এখন তা তিন হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে আসছে। অথচ ডলার বিক্রি চলছেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
কর-জিডিপি হারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে যদি বলি, আমরা কেবল শুনছিই যে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) কেনা হচ্ছে। ধরে নিলাম কেনা হচ্ছেই। কিন্তু শুধু এই ইএফডি দিয়ে কী লাভ হবে? কর প্রশাসন তো সেটাই থেকে যাচ্ছে। এখানে বদল আনতে হবে না? কিছু কি দেখা যাচ্ছে বদলানোর? আমি অন্তত দেখছি না। ইএফডি কিনেই যদি কর বাড়ানো যেত, তাহলে তো হতোই।
সামষ্টিক অর্থনীতিকে ঠিক পথে আনতে সুদের হারও বাজারভিত্তিক করতে হবে। আর ভর্তুকি তো কমাতে হবেই। বাংলাদেশের মতো একটা অর্থনীতির দেশে এত টাকা ভর্তুকি! ভাবা যায়! তবে এটা ঠিক নতুন ভর্তুকির দিকে সরকার যাচ্ছে না। পুরোনোগুলোর জন্যই এত বহন করতে হবে। তাও তো প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। ভর্তুকি কমানোর পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে। দেরি করা যাবে না।
সামষ্টিক অর্থনীতিকে ঠিক পথে আনতে সুদের হারও বাজারভিত্তিক করতে হবে। আর ভর্তুকি তো কমাতে হবেই।
আর এটা তো ঠিক, নীতি পদক্ষেপে যৌক্তিকতা না থাকলে আমরা ভালো কিছু আশা করতে পারি না। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা এ যৌক্তিকতার অনুপস্থিতি দেখছি।
আমি আশঙ্কা করছি, এত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলে আবার না কিস্তি আটকে যায়। একটা-দুইটা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে তেমন কিছু হবে না। কিন্তু পূরণ না হওয়ার সংখ্যাটা বেশি হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বহির্বিশ্বের আস্থায় চিড় ধরার আশঙ্কা থাকে। প্রশ্ন উঠবে, আসল লক্ষ্যমাত্রাগুলো পূরণ না হলে এত বড় ঋণ কর্মসূচি নিয়েই–বা লাভ কী হলো!
আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পিআরআই