কেমন বাজেট চাই
সংস্কার না করে আর উন্নয়ন করার সুযোগ নেই
৬ জুন ঘোষিত হতে যাচ্ছে নতুন বাজেট। নতুন বাজেটে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতেই বা করণীয় কী—এ নিয়ে কথা বলেছেন দুজন অর্থনীতিবিদ ও তিনজন ব্যবসায়ী। তাঁরা আর্থিক খাতের সংস্কার, রাজস্ব বৃদ্ধি ও দুন৴ীতি েরাধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামশ৴ দিয়েছেন।
আগামী বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফেরানোর বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাই মূল্যস্ফীতি যাতে কমে আসে, সে জন্য জোরালো ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজেটের আকার বড় করার যে প্রতিযোগিতা আছে, এবার সেখান থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। দেশের ভেতর থেকে ধার করা অর্থে কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া ঠিক হবে না।
তবে বিদেশি ঋণের প্রকল্প চলতে পারে। দেশে মধ্য থেকে ঋণ করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে তাতে ঋণের সুদ অনেক বেড়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে সরকারের ধারের বা ঋণের খরচও অনেক বেড়ে যাবে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যাংকের ঋণের সুদেও। এ জন্য এখন স্থানীয় অর্থায়নের পরিবর্তে বিদেশি অর্থায়ননির্ভর প্রকল্পের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
এ ছাড়া আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাতে বড় ধরনের সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। বাজেটে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা থাকা উচিত। বর্তমানে ব্যাংকগুলো যেভাবে চলছে, সেভাবে আর চলতে দেওয়া ঠিক হবে না। টাকা ছাপিয়ে কিছু ব্যাংক চালু রাখার যে ব্যবস্থা চলছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা থাকা দরকার বাজেটে। এমনিতে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাত নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে।
এ জন্য জোর করে কিছু ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিতে হয়েছে। রাজনৈতিক দৃঢ় অবস্থান না নিলে আর্থিক খাত সহজে ঠিক হবে না। এ জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ব্যাংক খাত ঠিক করার উদ্যোগ নিতে হবে। সংস্কার না করে এখন আর উন্নয়নের সুযোগ নেই। কারণ, বিদ্যমান ব্যবস্থায় চলতে থাকলে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। পাশাপাশি সঞ্চয় ও বিনিয়োগ কমবে। তাতে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
আগামী বাজেটে প্রশাসনেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনার পদক্ষেপ থাকতে হবে। দেশের কমপক্ষে ১০টি মন্ত্রণালয় আছে, যাদের কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু শুধু এসব মন্ত্রণালয়ের জন্য আলাদা মন্ত্রী ও সচিবদের বেতন-ভাতা বাবদ খরচ করতে হচ্ছে। মাথাভারী প্রশাসন না রেখে এখন সরকারের খরচ কমানোর সময় এসেছে।
সংস্কার না করলে বিনিয়োগ হবে না। বিদেশিরা এ দেশ থেকে চলে যাবে। তাই ব্যাংক খাত, রাজস্ব খাত, স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাতে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলে তাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট নীতিরও পরিবর্তন দরকার। তা না হলে এখনকার মতো অর্থ দেশে না এসে বিদেশে চলে যাওয়া অব্যাহত থাকবে। ফলে সংকট আরও বাড়বে। বর্তমানে যেভাবে চলছে, এভাবেই অর্থনীতি চলবে—এমনটা ভেবে থাকলে কখনো বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব হবে না। বিনিয়োগ না বাড়লে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।