মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ শ্বেতপত্র প্রকাশ, ব্যাংক ও ডেটা কমিশন দরকার
নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। ব্যবসা–বাণিজ্য ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটা কী করতে পারবে, তা নির্ভর করবে এর মেয়াদের ওপর। তবে দেশে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে নতুন সরকারের এগোনোর জন্য একটি শ্বেতপত্র তৈরি হওয়া জরুরি। একদিকে পরিস্থিতির ভিত্তি, অন্যদিকে ইতিহাস—দুই দিক থেকেই কাজ করবে এ শ্বেতপত্র। এ ধরনের শ্বেতপত্র পরামর্শমূলক হিসেবে কাজে দেয়, সরকারকে বেঁধে ফেলে না। সরকারের কৃতিত্ব বা দায় নেওয়ার জন্যই এটি হওয়া দরকার।
সরকার যদি এটি না করে তাহলে আর্থিক, বাণিজ্যিক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করে কাজটি করা উচিত। কাজটি করতে এক মাসের বেশি সময় নেওয়া যাবে না। বড়জোর দেড় মাস হতে পারে। সরকার যদি অন্য কিছু না-ও করে, এটাই একটা অবদান হিসেবে থাকবে।
আরেকটা কাজ করা দরকার। সেটা হচ্ছে, ডেটা বা তথ্য-উপাত্ত কমিশন। তথ্য-উপাত্ত হচ্ছে পঞ্চম স্তম্ভ। তথ্যের যেসব ব্যত্যয় হয়েছে, যেসব ঘাটতি আছে, সেসব পরিষ্কার করতে হবে। আর অর্থনীতির ফুসফুস হিসেবে কাজ করে ব্যাংক খাত। এটা প্রায় অচল হয়ে যাচ্ছে। এখন একটা ব্যাংক কমিশন গঠন করা দরকার। খেলাপি ঋণ আসলে কত, তা বের করা জরুরি। ব্যাংক থেকে একক ব্যবসায়ী কত ঋণ পাবেন, পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবার থেকে কতজন থাকবেন—এগুলোর মূল্যায়নও দরকার।
আরও দরকার খেলাপি গ্রাহকদের খেলাপি তালিকা থেকে বের হওয়ার নীতি এবং অবলোপন নীতি প্রণয়ন করা। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ভালো কাজ করে না। এখন ব্যাংক খাতের রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা দুটোই দরকার। ব্যাংক খাতকে ঠিক করতে গেলে সবার আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগটিকে বাদ দিতে হবে। কারণ, বিভাগটি গঠনই করা হয়েছে কর্তৃত্ব করার জন্য। ব্যাংক খাতের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ খাতের জন্য একটা টাস্কফোর্স গঠন করা দরকার।
তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও খাদ্যনিরাপত্তা হতে হবে এক নম্বর বিষয়।
খোলাবাজারে সাশ্রয়ী দামে যে নিত্যপণ্য বিক্রি করা হচ্ছিল, তা বজায় রাখতে হবে। আর নিশ্চিত করতে হবে মাথাপিছু খাদ্যনিরাপত্তা। খাদ্য উৎপাদনের তথ্য এত দিন বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা হয়েছে। এগুলো ঠিক করতে হবে। আর ঠিক রাখতে হবে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা।
সরকারের দায়-দেনা পরিস্থিতির মূল্যায়ন হওয়া জরুরি। বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি যেন উন্নয়ন-সহযোগীরা পূরণ করে, সেই চেষ্টা অবশ্যই থাকতে হবে সরকারের। কারণ, সাহায্যের ভালো একটা অংশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় হয়। আমি মনে করি, তিনটা বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা, মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা এবং নেতৃত্বের সক্ষমতা। এ তিনের ভালো সমন্বয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য আসবে।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)