মালিকেরা যে ঘোষণা দেবেন, তা লিখিত আকারে কারখানার ফটকে ঝুলিয়ে দিতে হবে

বেশ কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন। এতে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। তবে আজ পরিবেশ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকা ও মালিকদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা, তা নিয়ে লিখেছেন শ্রমিক নেতা বাবুল আখতার

বাবুল আখতার, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনসংগৃহীত

এবার পোশাকশ্রমিকদের অসন্তোষ যেভাবে আমলে নেওয়া হয়েছে, তা ঠিকঠাক হয়েছে বলেই মনে করি। মূল কথা হলো কারখানা চালু রেখে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরিবেশ তৈরি করা।

এবার দেখা গেছে, খুব বেশি কারখানা বন্ধ হয়নি। এমনটি শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও অসন্তোষ দমাতে ছাঁটাইয়ের খবরও খুব একটা পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে অতীতে যেমন দেখা গেছে, শ্রমিকদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া, তাঁদের ভয়ভীতি দেখানো; সেই সঙ্গে শ্রমিকেরা যেখানে থাকেন, সেখানে নানা রকম হয়রানি করা—এবার সেগুলো হয়নি বললেই চলে।

একধরনের ইতিবাচক পরিবেশ আছে। এবার বিক্ষোভের শুরুতে কারখানায় দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে; এরপর ত্রিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। সব মিলিয়ে একধরনের ইতিবাচক পরিবেশ আছে।

আজ বেশির ভাগ কারখানা খুলেছে। শ্রমিকেরা কাজেও যোগ দিচ্ছেন। এবারের আন্দোলনে যত দাবিদাওয়া করা হয়েছে, তার মধ্যে অর্থনৈতিক দাবি খুবই কম। ফলে আমি মনে করি, মালিক ও শ্রমিকদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান হওয়া সম্ভব। আশা করি তা হয়েও যাবে।

তবে আজ দুপুরের পর বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে অর্থাৎ সমস্যার সমাধান কতটা হলো। কেননা অতীতে দেখা গেছে, মালিক-শ্রমিকেরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে পৌঁছেছেন। ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মৌখিকভাবে; সেখানেই হয়েছে সমস্যা। দেখা গেছে, পরবর্তীকালে মালিকপক্ষ অস্বীকার করে বসেছে, তারা সে রকম কিছু বলেনি। ফলে আজ দুপুরের পর কী প্রক্রিয়ায় এই ঘোষণা আসে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। আমার মত, এবারের সমঝোতার ঘোষণা লিখিতভাবে দেওয়া হোক এবং কারখানার ফটকে সেই লিখিত ঘোষণা টাঙিয়ে দেওয়া হোক। তা হলে মালিকদের পক্ষে পরবর্তীকালে আর কিছু অস্বীকার করা সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন

লিখিত ঘোষণার কথা বলছি তার আরেকটি কারণ হলো, অতীতে দেখা গেছে, মালিকপক্ষ ৪০-৫০ জন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে ফয়সালা করেছেন; কিন্তু কারখানার শ্রমিকসংখ্যা পাঁচ হাজার। বাকি শ্রমিকেরা জানেনই না, ঠিক কী বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। তখন তাঁদের মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের মুখের কথার ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। এতে তথ্যের ফাঁক থেকে গেছে।

এবার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা তাঁদের মতো করে দাবিদাওয়া উপস্থাপন করেছেন। শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এগুলো একত্র করে ২৫ দফা তৈরি করা হয়েছে। তবে আমাদের বিবেচনায় দফা আরও বেশি হবে। তবে আলোচনার যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা আশাব্যঞ্জক।

  • বাবুল আখতার: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন