বিশেষ সাক্ষাৎকার: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
অর্থনীতি নিয়ে উত্তরণকালীন সমঝোতা প্রয়োজন
চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। আলোচনায় আরও উঠে এসেছে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ, রাশিয়া থেকে তেল কেনার উদ্যোগ, ভূরাজনীতি ইত্যাদি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর শাহ।
আইএমএফের কাছে ঋণ নেওয়া শুধু টাকার জন্য নয়; সংস্কার ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার জন্যও দরকার।
অর্থনৈতিক নীতিমালা পুনর্বিন্যাস করার জন্য যিনি নেতৃত্ব দেবেন, তিনি অদৃশ্য হয়ে আছেন।
নতুনভাবে দুই-তিন বছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন নীতি সমঝোতা বা কর্মসূচি প্রয়োজন।
একটি সীমার মধ্যে রেখে সুদের হার ছেড়ে দেওয়া উচিত।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। কারও জন্য তা আতঙ্কের। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থাকলে অর্থনীতির দুর্বলতা আরও ঘনীভূত হয়, সবল দিকগুলো দুর্বল হতে থাকে। অর্থনীতির নীতি বাস্তবায়ন অনেকটাই আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। তাই আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনাই অর্থনীতির স্বল্পমেয়াদি ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাজেট এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ পর্যায়ের যে প্রাক্কলন, তা বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক বাস্তবতায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। যেহেতু অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে, সেহেতু নতুনভাবে দুই-তিন বছরের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন নীতি সমঝোতা বা উত্তরণকালীন কর্মসূচি প্রয়োজন। এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ছাড় দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সংরক্ষণ।
বর্তমানে আমরা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কেউ কেউ মনে করেন, বৈদেশিক চাপের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এটি আংশিক সত্য। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটজনক পরিস্থিতি আমাদের চাপে ফেলেছে। কর-জিডিপি অনুপাত এখন মাত্র ৯ শতাংশের মতো। এটি যদি ১৪-১৫ শতাংশ হতো, তাহলে সরকারের আরও বেশি খরচ করার সামর্থ্য থাকত, যা অর্থনীতিকে একধরনের স্বস্তি দিত। বর্তমান পরিস্থিতিকে আমি বলব, উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতির গরিব সরকার। সরকার তার জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে পারছে না। ভর্তুকি দিতে পারছে না। এত দিন ধরে যে উন্নয়ন–আলেখ্য রচনা করা হয়েছে, তাতে দৃশ্যমান ভৌত অবকাঠামোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বেশি বিনিয়োগ করা হয়নি। ফলে এখন যে উৎপাদনশীল দক্ষ শ্রমশক্তি দরকার ছিল, তা পাচ্ছি না। সরকারের বর্তমান উন্নয়ননীতিতে একধরনের দ্বন্দ্ব ও বৈপরীত্য আছে।
প্রশ্ন :
অন্তর্বর্তীকালীন নীতি সমঝোতা কীভাবে হবে? কোন কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া উচিত?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এই অন্তর্বর্তীকালীন অর্থনৈতিক নীতি সমঝোতায় তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে। এই এগুলো হলো সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা; উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে সমর্থন দেওয়া; বিপন্ন মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া। এই নীতি সমঝোতা প্রণয়ন ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণমূলক হতে হবে।
এই নীতি সমঝোতা করতে সরকারকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে। যেমন মন্ত্রিপরিষদ; আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো–অর্ডিনেশন কমিটি; অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি—এসব জায়গায় আলোচনা হতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে সরকারের নিজেদের রাজনৈতিক সহযোগী; এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট শ্রেণিপেশার সঙ্গেও এ নিয়ে আলাপ আলোচনা দরকার।
সরকারের নিজেদের মধ্যে যেসব কমিটি আছে, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সেসব জায়গায় আলোচনার কথা শোনা যায় না। এর ফলে নীতি প্রণয়নে একধরনের স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের অভাব আছে। এসব করার জন্য নেতৃত্ব দরকার। এ ধরনের অর্থনৈতিক নীতিমালা পুনর্বিন্যাস করার জন্য যিনি নেতৃত্ব দেবেন, তিনি অদৃশ্য হয়ে আছেন।
বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণে দুই-তিন বছরের জন্য ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক নীতি সমঝোতা হলে দুই ধরনের উপকার হবে। প্রথমত, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থার কাছে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে দর-কষাকষি সহজ হবে। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক উত্তাপপূর্ণ কর্মকাণ্ডের সময়ে অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সৃষ্ট এই নীতি সমঝোতা অর্থনীতিকে সুরক্ষা দেবে।
প্রশ্ন :
বর্তমান পরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো স্থিতিশীল রাখতে কী করা দরকার?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: দেরিতে হলেও সরকার অবশ্য কিছু কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন আমদানি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি ব্যয় সাশ্রয়, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহি আনা। এসব পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় হলেও যথেষ্ট নয়। এসব উদ্যোগ বিচ্ছিন্ন, অসম্পূর্ণ, অপর্যাপ্ত এবং ধারাবাহিকতা নেই। এত দিন অর্থনীতির এই সমস্যাগুলো অস্বীকারের প্রবণতা ছিল। এখন চাপে পড়ে সামান্য স্বীকার করা হচ্ছে।
প্রশ্ন :
তাহলে কী করা উচিত?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: একটি সীমার মধ্যে রেখে সুদের হার ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এ ছাড়া নজরদারির মধ্যে রেখে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা দরকার। এই দুটি নীতির বাইরে সরকারের অর্থের জোগানপ্রবাহ ঠিক রাখতে কর আহরণ অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে করদাতার সংখ্যা বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধি করতে হবে।
এ ছাড়া সরকার উন্নয়ন ব্যয় কাঠামোতে কিছু কিছু পরিবর্তন আনছে। যেমন সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে ক, খ ও গ শ্রেণিভুক্ত করেছে। ক শ্রেণিতে মনোযোগ দেওয়া; খ-তে বিবেচনাধীন রাখা এবং গ-তে পরিত্যাজ্য করা। এটি সঠিকভাবে করা উচিত।
এবার আসি, ভর্তুকির বিষয়ে। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের ভর্তুকিকাঠামো পুনর্বিন্যাস করা। মোট ভর্তুকি কত দিচ্ছি, তা কম গুরুত্বপূর্ণ; কাকে ভর্তুকি দিচ্ছে, তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির ভাষায় ভালো ভর্তুকি আছে, খারাপ ভর্তুকিও আছে। কৃষি খাতের ভর্তুকি ভালো ভর্তুকি। আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রের অলস সক্ষমতার জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া খারাপ ভর্তুকি। ভর্তুকি প্রদানের ক্ষেত্রে জ্বালানি ও খাদ্য উৎপাদনকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ, জ্বালানি তেল সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে। আর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সার ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দরকার।
মুদ্রাপ্রবাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হচ্ছে। বিবেচনায় আনতে হবে, মুদ্রাপ্রবাহ সংকোচন করলে যদি প্রবৃদ্ধি না হয়, কর্মসংস্থান কম হয়, সরকারের আয় না হয়। তাহলে বিপন্ন জনগোষ্ঠীর যে ধরনের সাহায্য দরকার হয়, তা তারা পাবে না।
তাই মুদ্রানীতিকে যত কঠোর করা হবে, সেই অনুসারে আর্থিক নীতি বা খরচ করার সামর্থ্য বাড়াতে হবে। খরচ করার সামর্থ্য বাড়াতে কর আহরণের পাশাপাশি বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার সঠিক ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হবে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে সুরক্ষা দিতে গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে হবে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোতে বড় সংস্কার লাগবে। এ মুহূর্তে তা দেখছি না।
প্রশ্ন :
উৎপাদন, কর্মসংস্থান—এসব বিষয়ে এখন কী করা উচিত?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে নীতিসহায়তা দিতে হবে। আমনের উৎপাদন এখন বড় ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। দেরিতে বৃষ্টি, সার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি—এসব কারণে আমন উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া সারের লভ্যতার সংকটও আছে। আমন উৎপাদনের সরকারের মনোযোগ থাকলেও মাঠপর্যায়ে তা দেখা যায় না।
আবার নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পকারখানার শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতে হবে। চা–শ্রমিকেরা আন্দোলন করেছেন। রপ্তানিমুখী শিল্পেও এ ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টির শঙ্কা আছে। তৈরি পোশাকশ্রমিকদের বিদ্যমান ন্যূনতম মজুরিকাঠামোর মেয়াদ তিন বছরের বেশি হয়েছে।
টাকার বিনিময় হার ১০ শতাংশ বেড়েছে। পোশাক রপ্তানিকারকেরা এর সুফল পাচ্ছেন। এই সুফলের কিছুটা অংশ শ্রমিকদের দেওয়া উচিত। বর্তমানে যে বাজার পরিস্থিতি, তাতে তাদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সুরক্ষা দিতে নানা কর্মসূচি নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী শিল্পে কিছুটা স্বস্তি দিতে হবে।
প্রতিবছর ২০ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করেন। তাঁদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশের কর্মসংস্থান হয় বিদেশে। প্রবাসে প্রচলিত বাজার, বিকাশমান বাজার ও অন্য কোনো দেশের বাজারে শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা মসৃণ রাখতে হবে। এর পাশাপাশি দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার কর্মসূচি অব্যাহত যেন থাকে।
প্রশ্ন :
বিপন্ন মানুষকে কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া যাবে?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: পিছিয়ে পড়া বিপন্ন মানুষই দুর্দশার সবচেয়ে বড় ভাগীদার। এ মুহূর্তে নিম্নমধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের জীবনমান রক্ষা করা বড় অর্থনৈতিক দায়িত্ব। সরকারের ঘোষিত ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ব্যবস্থাকে দ্রুততার সঙ্গে ও দুর্নীতিমুক্তভাবে চালু করা দরকার। টিসিবির মাধ্যমে চালসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য জেলা পর্যায়ে বিক্রি করা দরকার।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ও সংখ্যা বাড়াতে হবে। যাঁরা এখন ভাতা পাচ্ছেন, তা বাড়িয়ে কমপক্ষে এক হাজার টাকা করা উচিত। আড়াই হাজার-তিন হাজার ডলারের মাথাপিছু আয়ের দেশে মাসিক ভাতার পরিমাণ ৪-৫ ডলার, এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় একজন সুবিধাভোগীর বছরে মাত্র ৬০ ডলার ভাতা পান, এটি অন্যায় ও অর্থনৈতিক অবিচার।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নানা ধরনের অসংগতি আছে। যেমন উপযুক্ত লোকেরা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। উপযুক্ত লোক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বৈষম্যমূলকভাবে বাছাই করা হয়। আবার যাঁদের সুবিধাভোগীর আওতায় আনা হয়, তাঁরা অপর্যাপ্ত বা কম ভাতা ও পণ্য পাচ্ছেন।
কোভিডের পর যুব বেকারত্ব আরও প্রকট হয়েছে। বহু যুবক প্রচ্ছন্ন বেকার হয়ে গেছেন। স্বনিবন্ধনের মাধ্যমে যাচাই–বাছাই করে তাঁদের এককালীন ভাতা দেওয়া উচিত। অথবা যুব ক্রেডিট কার্ড চালু করা যেতে পারে।
প্রশ্ন :
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছে। আইএমএফের কাছে ঋণ নেওয়া নিয়ে একধরনের আলোচনা-সমালোচনা আছে। আপনি কী মনে করেন?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: গত ১৯ মে আমি বলেছিলাম, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সময় এসেছে। আমি এখনো মনে করি, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া উচিত। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি—এসব ক্ষেত্রে একধরনের আর্থিক সমর্থন প্রয়োজন। বাংলাদেশ ৪৫০ কোটি ডলার চেয়েছে, সেটা যৌক্তিক। কারণ, আইএমএফের কাছে ঋণ নেওয়া শুধু টাকার জন্য নয়; সংস্কার ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার জন্যও দরকার। আমরা যা বলে করাতে পারিনি, সেটা যদি আইএমএফ বললে হয়, সেটা ভালো। আইএমএফকে যদি আনতে হয়, তাহলে আগে আনাই ভালো। শ্রীলঙ্কা এটার শিকার হয়েছে।
আইএমএফ সম্পর্কে তাঁদের মনেই আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, যাঁরা এত দিন অর্থনীতির উন্নয়নের উচ্ছ্বাস নিয়ে ছিলেন। এর ভেতরে যে কাঠামোগত দুর্বলতাগুলো রয়ে গেছে, তা অস্বীকার করে গেছেন। আমাদের মতো পেশাজীবীরা আইএমএফ নিয়ে এত চিন্তা করি না। আইএমএফ সৃষ্টিই করা হয়েছে এ ধরনের প্রতিকূল সময়ে সাহায্য করার জন্য। সমস্যা হয়েছে, তাঁরা (যাঁরা আতঙ্কে থাকেন) এখন কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন এত দিনের উচ্ছ্বাসপূর্ণ উন্নয়নের কাহিনি।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: ভূ-অর্থনীতি এখন ভূরাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আশঙ্কা হলো এই দ্বন্দ্বাত্মক সম্পর্ক ভবিষ্যতে বাড়বে, কমবে না। সরকার এখন সব দিক রক্ষা করে একটি বৈদেশিক নীতি পরিচালনার চেষ্টা করছে। দেখার বিষয়, মধ্য মেয়াদে এটি টিকবে কি না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আছে। দেশের মানবাধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক নজরদারি এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা সুস্পষ্ট হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক, চলমান প্রকল্প শেষ করা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা—এগুলো কীভাবে জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে বিশেষ বিচক্ষণতা, কারিগরি সক্ষমতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা প্রয়োজন পড়বে। এখানেও একই সমস্যা। এ ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য সব দেশে জাতীয় ঐকমত্য দরকার হয়। সেই উদ্যোগ ও প্রক্রিয়া দেখছি না।