শিগগিরই ব্যাংক কমিশন গঠন করা দরকার
শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৫ জুলাই থেকে দেশজুড়ে সহিংসতা তৈরি হয়। তাতে ব্যবসা–বাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের কারণে গত রোববার থেকে অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেছেন শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় ব্যবসা–বাণিজ্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনতে দ্রুত দেশে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
দেশের অর্থনীতির সামনে এখন বিশাল চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের ক্ষতি অনেক দিন থেকেই চলছে। ঠিক করতেও সময় লাগবে। শিগগিরই একটা ব্যাংক কমিশন করা দরকার। কমিশন করা না হলেও দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অন্তত একটা গ্রুপ করা যেতে পারে।
আর আর্থিক খাতে সংস্কার করা যে দরকার, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ঢেলে সাজাতে হবে। কর-জিডিপির হার ৪ থেকে ৬ শতাংশ বাড়াতে পারলেও ঘাটতি বাজেটের জন্য অত ধার করতে হবে না। পাশাপাশি দরকার স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেওয়া। সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর প্রতি সরকারের সাহায্য থাকবে। তাদেরও কর আরোপের ক্ষমতা থাকতে পারে। অবশ্যই তা হতে হবে নির্মোহভাবে। মুখ চেনা বা প্রভাবশালী লোক হলে কর কম, এমনটা যেন না হয়। পাশাপাশি তাদের জবাবদিহি থাকতে হবে। মোটকথা, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের সম্পর্ক শুধু রাজনৈতিক হবে না, অর্থনৈতিকও হতে হবে।
সামষ্টিক অর্থনীতি অসুবিধার মধ্যে আছে। এটি ঠিক করতে আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে আইনের শাসন। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি চালু আছে, তা এক অর্থে ভালো। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসবে। আমরা স্বাগত জানাই। কে আওয়ামী লীগ করতেন, কে বিএনপি করতেন, সেগুলো খুঁজতে যাওয়া ঠিক হবে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। এ ভুলটা এক-এগারোর সরকার করেছিল। স্বজনতোষী পুঁজিবাদ বাদ দেওয়ার অর্থনৈতিক নীতি-পদক্ষেপ নিতে হবে। আর স্বাস্থ্য খাতটাকে গতিশীল করতে হবে। চিকিৎসাব্যবস্থা ঠিক না থাকায় বছরে ৫০০–৬০০ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশে চলে যায়।
সরকারের বদল হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে তো আর বদল হয়ে যায়নি কিছু। চাইলে তারা কাজ করতে পারে। আসলে নেতৃত্ব একটা বড় বিষয়। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক ক্ষমতা, কিন্তু তারা তা খাটায় না। তারা কোনো সিদ্ধান্তের জন্য তাকিয়ে থাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তিত হওয়ায় একটা বিরল সুযোগ তৈরি হলো। একটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশ তৈরির পথ তৈরি হয়েছে। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আশা করছি, অর্থনৈতিক নেতৃত্ব সুযোগটা কাজে লাগাবে।
পাশাপাশি আমি এ–ও বলতে চাই, সময় এসেছে ছাত্রদের দলীয় রাজনীতির পথ বন্ধ করার। ছাত্ররা হবে অরাজনৈতিক শক্তি। আবুল মাল আবদুল মুহিতরা একসময় হলের ভিপি হয়েছিলেন। ভালো ছাত্ররা একসময় রাজনীতি করতেন। সেই দিন ফিরিয়ে আনতে হবে।