আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকার ও এনজিওর অংশীদারি প্রয়োজন

দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকা অপরিসীম। সাত শর বেশি প্রতিষ্ঠান এ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। ক্ষুদ্রঋণের অগ্রযাত্রা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন। এ বিষয়ে শক্তি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক হুমায়রা ইসলামের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতীক বর্ধন

প্রথম আলো:

ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে গত ৫৩ বছরে এনজিওগুলোর ভূমিকা কীভাবে দেখছেন?

হুমায়রা ইসলাম: দারিদ্র্য বিমোচনে এনজিওগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বহুমুখী। এনজিওগুলো সাধারণত সরকারি সংস্থা থেকে ভিন্নভাবে কাজ করে থাকে, যা তাদের দারিদ্র্য বিমোচনে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণ খাতের প্রবর্তক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক মডেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নারীরা একসময় ঘর থেকে বেরিয়ে বৈঠকে এসেছে, নাম স্বাক্ষর করতে শিখেছে, যার ফলে একজন নারী অন্যের মা, স্ত্রী, কন্যা বা সহোদরার পরিচিতির বাইরে এসে নিজেদের পরিচিতি পেয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী প্রজন্মের মেয়েরা মায়েদের ব্যবসায়িক ও সামাজিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবং একই সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের বড় উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শুধু তা–ই নয়, বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে করপোরেট জগৎ থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, সাংবাদিকতা, আইন ও বিচার বিভাগ, প্রশাসন, শিল্পক্ষেত্রসহ সমাজের সর্বত্র নিজেদের বলিষ্ঠ ছাপ রাখছে।  

প্রথম আলো:

কৃষির উন্নয়নে  এনজিওগুলো কী ভূমিকা পালন করতে পারে?

হুমায়রা ইসলাম: বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি যান্ত্রিকীকরণ ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের ফলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তিত এই বাস্তবতায় এনজিওগুলোর ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বড় প্রতিষ্ঠান যখন কৃষিক্ষেত্রে কাজ করে, তখন তাদের মূল লক্ষ্য থাকে মুনাফা। কিন্তু এনজিওগুলো যখন কাজ করে, তখন তাদের মূল লক্ষ্য থাকে জনকল্যাণ। আমরা চাই মধ্যস্বত্বভোগী নয়, কৃষকরাই যেন তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান। এ জন্য আমরা তাদের সব ধরনের তথ্যপ্রযুক্তির সেবা দিয়ে চেষ্টা করছি ব্লক চেইনে তাদের ভূমিকা নিশ্চিত করতে।

প্রথম আলো:

ক্ষুদ্রঋণের সেবা ডিজিটাইজেশনের প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন কী?

হুমায়রা ইসলাম: যেখানেই নগদ লেনদেন, সেখানেই অনিয়মের ঝুঁকি থাকে। প্রযুক্তি আমাদের সেই ঝুঁকি কমিয়ে দিয়েছে। আমাদের কাছ থেকে যে সদস্য ঋণ নিচ্ছে এবং সেই ঋণের কিস্তি আমরা যার কাছ থেকে ফেরত নিচ্ছি, তিনি যে সেই একই ব্যক্তি, তা ডিজিটাল মাইক্রোফিন্যান্সের মাধ্যমে সেটা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। শক্তি ফাউন্ডেশন তাদের প্রত্যেক সদস্যের পাস বইয়ে কিউআর কোড যুক্ত করেছে। আমাদের মাঠকর্মীরা সদস্যদের বাড়ি গিয়ে সেই কোড তার স্মার্টফোনে স্ক্যান করেন। ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, শক্তি ফাউন্ডেশনই একমাত্র এনজিও-এমএফআই, যারা এককভাবে বিকাশের বৃহত্তম এজেন্ট। আমাদের তিন হাজার কর্মী বিকাশ এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।

প্রথম আলো:

এসএমই খাতের উন্নয়নকে আপনারা কীভাবে আমলে নিচ্ছেন?

হুমায়রা ইসলাম: এসএমই খাত যেমন অর্থনীতির প্রাণ, ঠিক তেমনি উদ্যোক্তা হলো এসএমই খাতের প্রাণ। যেখানে একজন এসএমই উদ্যোক্তার জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া, সেখানে শক্তি ফাউন্ডেশন সহজ শর্তে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঋণ দিয়ে থাকে। এসএমই খাতে আমাদের কার্যক্রম শুধু অর্থায়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, উদ্যোক্তাদের ব্যবসার কৌশল এবং পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজন করার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে ব্যবসায়িক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শক্তি থেকে উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করার মাধ্যমে বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করার জন্য কাজ করা হচ্ছে।  

প্রথম আলো:

আপনাদের প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত কী পরিমাণ ক্ষুদ্রঋণ দিয়েছে? তার কী প্রভাব পড়েছে মনে করছেন?

হুমায়রা ইসলাম: শক্তি ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত ২২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা ক্ষুদ্রঋণ দিয়েছে। শক্তি ফাউন্ডেশন নারীশক্তিতে বিশ্বাসী। এখানে ৯৮ শতাংশ সদস্য হচ্ছেন নারী। তাই ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা বাংলাদেশের মানুষকে আত্মবিশ্বাসী ও স্বনির্ভর হতে সাহায্য করছে। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে।