৬ জুন ঘোষিত হতে যাচ্ছে নতুন বাজেট। নতুন বাজেটে কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতেই বা করণীয় কী—এ নিয়ে কথা বলেছেন দুজন অর্থনীতিবিদ ও তিনজন ব্যবসায়ী।
দেশের অর্থনীতি একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের বাড়তি রাজস্ব দরকার। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতি ভালো না হলে সরকারের কর আদায় বাড়বে না। বিভিন্ন কারণে ব্যবসার খরচ বেড়ে গেছে। শিল্পকারখানা টিকিয়ে রাখতেই এখন হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। শিল্প বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সরকারেরও রয়েছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর বাড়ানো উচিত হবে না। ব্যক্তির ওপর কর বাড়ে এমন পদক্ষেপ নেওয়াও ঠিক হবে না।
সব সময় যাঁরা কর দেন, তাঁদের ওপর নতুন করে করের বোঝা চাপানো হয়। সেটি না করে করজাল বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। করনীতিতে ধারাবাহিকতার বিষয়টি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সততার সঙ্গে ব্যবসা করেন, এমন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই কর বেশি দেন। সরকার যদি রাজস্ব বাড়ানোর একমুখী চিন্তা করে, তাহলে শিল্পায়ন হবে না। আর শিল্পায়ন না হলে নতুন করে কর্মসংস্থানও হবে না।
ব্যবসার পরিধি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। নিত্যনতুন কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। তবে সে অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট এইচএস কোড করা হচ্ছে না। ফলে শুল্কায়নের সময় নতুন কাঁচামাল বিবিধ তালিকায় যুক্ত করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কীভাবে অন্য দেশের তুলনায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জন করব। দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো দরকার।
প্রতিবছর ২৫ লাখ মানুষ নতুন কর্মসংস্থানের জন্য চাকরির বাজারে আসেন। এই নতুন লোকজনের জন্য স্থানীয়, বিদেশি কিংবা দেশি-বিদেশি যৌথ বিনিয়োগ দরকার। আবার নতুন বিনিয়োগের জন্য দরকার অনুকূল পরিবেশ। গত কয়েক বছরে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসার গতি শ্লথ।
আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র এফডিআই গ্রহীতা নই। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই এফডিআই আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে অন্য দেশের তুলনায় কর, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা বেশি দেবেন, সেটি পরিষ্কার করে জানাতে হবে। আশা করব, আগামী বাজেটে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকবে। সরকার অনেকগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চল করছে। এতে বিনিয়োগকারীদের নিষ্কণ্টক জমি পাওয়াটা সহজ হচ্ছে, যা খুবই ইতিবাচক। এ ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ মেলা করা হচ্ছে। সেগুলো বিনিয়োগকারীদের টার্গেট করে করতে হবে। সেখানে ব্যবসায়ীদের যুক্ত করা দরকার।