ব্যাংক খাতের প্রকৃত অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে

নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। ব্যবসা–বাণিজ্য ও অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী।

মুস্তফা কে মুজেরী

বেশ কয়েক বছর ধরে আর্থিক খাতের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ব্যাংক খাতে ধসের সূচনা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ হবে ব্যাংক খাতের ধস ঠেকানো ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। অনেক বছর ধরেই ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এসব বিশৃঙ্খলা রোধে ব্যর্থ হয়েছে এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থাও বেশ নাজুক হয়ে পড়েছে। গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নররা পদত্যাগ করায় সংস্থাটি অনেকটা নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে।

তাই জরুরি ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে আগে সচল করতে হবে। এরপর পুরো খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।

ব্যাংক খাতে অনিয়ম যে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, তা এক দিনে দূর করা সম্ভব হবে না। তবে নতুন সরকারের উচিত হবে শুরুতেই একটা বার্তা দেওয়া। নতুন করে আর কোনো অনিয়ম হবে না, আগের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন বার্তা দিতে হবে। যেসব ব্যাংক দখল করা হয়েছিল, তা প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। তবে তাড়াহুড়া না করে নিয়মের মধ্যে এসব করতে হবে। যারা এসব ব্যাংক খারাপ অবস্থায় নিয়ে গেছে এবং যেসব অনিয়ম হয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

বেশ কিছুদিন ধরে কয়েকটি ব্যাংককে টাকা ধার দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার অনেকে রপ্তানি তহবিল থেকে ডলার ঋণ নিয়েও ফেরত দিচ্ছে না। এটাই ব্যাংক খাতের প্রকৃত পরিস্থিতি। ব্যাংক খাতে যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগে খাতটির প্রকৃত অবস্থা কী, তা খুঁজে বের করা দরকার। ব্যাংক খাতের প্রকৃত অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। এরপর অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে, কোন কাজটি এখনই করা হবে আর কোনটা পরে। ব্যাংক খাত সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার কাজটি এখনই শুরু করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংককে সক্রিয় করে তাদের দিয়েই এসব কাজ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তার নিজেদের ক্ষমতা প্রয়োগের শক্তি ফিরিয়ে দিতে হবে। এমন ব্যক্তিকে গভর্নর পদে বসাতে হবে, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দেশের দিকে তাকাবেন। কারও প্রভাব তার ওপর থাকবে না। তিনি কোনো শিল্প গ্রুপ বা ব্যাংকের স্বার্থ দেখবেন না। অর্থনীতি ও আমানতকারীদের স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, বাংলাদেশ ব্যাংককে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অনেক সময় চলে গেছে। অর্থের অনেক ক্ষয় হয়ে গেছে। টাকা ও ডলার দুটোই ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি না হলে ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি এতটা নাজুক হতো না। এ জন্য বিলম্ব না করে এখনই ব্যাংক খাত ঠিক করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

  • মুস্তফা কে মুজেরী
    সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ