আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে—এটা স্বস্তির খবর। অর্থের অঙ্কে এই ঋণ তেমন বড় কিছু নয়। এই অর্থ দিয়ে আমাদের সব সমস্যা মিটবে না। এমনকি সব অর্থও আমরা একসঙ্গে পাব না, তারপরও বলব, এই ঋণ বাংলাদেশের লেনদেনের ভারসাম্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া আইএমএফের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হওয়ার খবরের একধরনের বার্তা আছে। এটি বহুপক্ষীয় অন্য সংস্থাগুলোকে আশ্বস্ত করবে।
প্রথম কিস্তিতে বাংলাদেশ ৪৫ কোটি ডলার পাবে, এটি আমাদের রিজার্ভের সাপেক্ষে তেমন কিছু নয়। আইএমএফের হিসাবে, আমাদের যে রিজার্ভ, তার সাপেক্ষেও এটি বড় কিছু নয়। কিন্তু এতে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো প্রতিষ্ঠান আমাদের বাজেট সহায়তা দিতে উৎসাহিত হবে। বাজেট সহায়তাও কিন্তু রিজার্ভে যোগ হয়, সেদিক থেকে এর গুরুত্ব আছে।
ঋণের সঙ্গে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, এনবিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, জ্বালানি খাতের ক্যাপাসিটি চার্জ—এসব নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। সুশাসনের অভাবের কথাও অনেক বছর ধরে আলোচনা হচ্ছে। শুধু রিজার্ভ নয়, ব্যয় করার মতো অর্থের অভাব আছে আমাদের।
সুতরাং আমরা সংস্কার করে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারলে আমাদেরই লাভ। এসব করা গেলে আমাদের খেলাপি ঋণ কমবে বা রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি পাবে। আমি মনে করি, আইএমএফের সঙ্গে আমাদের ঋণ আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলো আমাদের নিজেদের গরজেই করা উচিত। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির জন্য এটি জরুরি।
আইএমএফের আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল মুদ্রার বিনিময় হার বাজারমুখী করা। এটা নতুন কিছু নয়, দেশের অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই এসব বলে আসছেন। এসব কিছু শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা জরুরি। আইএমএফ ভর্তুকি হ্রাসের কথা বলেছে। সেটা একেবারে অপ্রাসঙ্গিক, তা বলব না। তবে কোন খাতে আমরা সমন্বয় করব, তা আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা যেন হুমকির মুখে না পড়ে, তা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের করতে হবে।
আরেকটি বিষয় হলো, আইএমএফের এই ঋণের সুদহার ২ শতাংশের ওপরে। এটা যে একেবারে কম তা নয়, তবে বাণিজ্যিক ঋণের চেয়ে কম, যার হার ৪-৫ শতাংশ। এই ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে যেন আমরা অসুবিধার সম্মুখীন না হই, তা দেখতে হবে।
অর্থ কিস্তিতে আসবে। প্রথম কিস্তির পর দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ যখন আসবে, তখন কিন্তু মূল্যায়ন হবে, আমরা কতটা সংস্কার করতে পেরেছি। তার ভিত্তিতে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ আসবে। সুতরাং আমাদের অর্থনীতির দুর্বলতা, সুশাসনের অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা—এসব সার্বক্ষণিক আমাদের ভাবনায় থাকতে হবে।
মহামারির একটা ধাক্কা আমরা মোকাবিলা করেছি। তা শেষ হতে না হতে শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সেই সঙ্গে যেকোনো সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতে পারে। ফলে আমরা যদি অভ্যন্তরীণভাবে এসব মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারি, তাহলে ঝুঁকি কমে। এটা হলো অর্থনীতির প্রতিরক্ষণ সক্ষমতা। সে জন্য সংস্কার দরকার। তবে নিজেদের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুধাবন করে তা করতে হবে।