‘ঘুষের টাকার ওপরেও কর দিতে হচ্ছে’, ব্যবসা–বাণিজ্যে মূল চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি

দেশে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবসা-বাণিজ্যে মূল চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি। চলতি বছরও প্রায় ১৭ শতাংশ ব্যবসায়ী দুর্নীতিকে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এটিসহ অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অদক্ষ আমলাতন্ত্র, উচ্চ করহারসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে ১৭টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত এপ্রিল-জুলাই সময়ে পরিচালিত জরিপে বিভিন্ন খাতের ৭৪ ব্যবসায়ী অংশ নেন। তাঁরা আগামী দুই বছরের জন্য মূল্যস্ফীতিকে অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। এ ছাড়া এ তালিকায় রয়েছে অস্বাভাবিক আবহাওয়া, দূষণ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও বৈষম্য।

রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক ইন সেন্টারে আজ রোববার ‘বাংলাদেশে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও প্রক্রিয়ায় সংস্কার’ শীর্ষক সেমিনারে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিডার নির্বাহী পরিচালক আশিক চৌধুরী।

সেমিনারে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে সব সমস্যার মূল সমস্যা দুর্নীতি। ভ্যাট-ট্যাক্স অফিসেই বছরে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয় আমাদের। সেটা আবার দেখানো যায় না। সে জন্য ঘুষের টাকার ওপর আবার কর দিতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংস্কার শুরু করা দরকার। বৃত্তের বাইরে চিন্তা করতে হবে। নতুন করে কর, ভ্যাট ও কাস্টমসকে সাজাতে হবে। এটা করা গেলে ৫০ শতাংশ দুর্নীতি কমানো যায়।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে এনবিআরের সাবেক সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, আমলাতন্ত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। দেশের মধ্যে সরকারি কর্মচারীরা নিজেদের সবচেয়ে পণ্ডিত মনে করেন। তবে কাকে কোথায় বসাতে হবে, তাঁরা সেটা জানেন না। ফলে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা দরকার। তিনি বলেন, অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করার জন্য অপেক্ষায় আছেন। তবে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দরকার। না হলে বিনিয়োগকারীরা বেশি দিন অপেক্ষা করবেন না; তাঁরা অন্য দেশে চলে যাবেন।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে আসা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) অর্ধেকই পুনর্বিনিয়োগ। প্রকৃত এফডিআই নিম্নমুখী। ফলে আমাদের অনেকদূর যেতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে পাঁচ বছর পর্যন্ত নীতিসহায়তা অপরিবর্তিত রাখার চিন্তাভাবনা চলছে।’

বিদায়ী সরকার ১০৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। তার মধ্যে ৬৮টি সরকারি পর্যায়ে। যদিও এখন পর্যন্ত একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলও চালু করতে পারেনি সরকার। এ বিষয়ে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা অর্থহীন। আমরা সরকারিভাবে ১০টির কম, সুনির্দিষ্ট করে বললে ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’