সয়াবিন তেলের সরবরাহ আজ থেকে স্বাভাবিক হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারে তেলের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ফলে সরবরাহে আর কোনো ঘটতি হবে না। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ আজ (সোমবার) থেকে স্বাভাবিক হবে।
ঢাকায় সচিবালয়ে আজ সোমবার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
খুচরা পর্যায়ে বেশ কিছুদিন ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশেও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলে আসছে। এরই মধ্যে ডিলার বা সরবরাহকারী পর্যায় থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমে যায়। ফলে খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহে সংকট তৈরি হয়। এমন অবস্থায় আজ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তথ্য বিশ্লেষণ করে বাস্তবভিত্তিকভাবে বোতলজাত সয়াবিনের একটি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি, এর মাধ্যমে অনুমাণের ওপর ভিত্তি করে মজুতদারি আজ থেকে বন্ধ হবে।
তেলের দাম বাড়ানোর জন্য কোম্পানিগুলো এত দিন সরবরাহে ঘাটতি তৈরি করেছিল কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় ডিলাররা আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য সম্পর্কে সার্বিকভাবে অবহিত থাকেন। তাঁদের আকাঙ্ক্ষা ছিল, এই দামটা সমন্বয় হতে পারে। এ কারণে হয়তো অনেকে সরবরাহে বিলম্ব ঘটিয়েছেন; তাতে বোতলজাত সয়াবিনের কিছুটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আশা করছি, এই ঘাটতি থাকার আর কোনো কারণ নেই।’
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘তেলের সরবরাহ–সংকট নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধানের জন্য অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমরা ট্যারিফ কমিশনের সহায়তায় জিনিসটাকে বিন্যাস করে দেখেছি।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, দেশের বাজারে সর্বশেষ বোতলজাত সয়াবিনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল গত এপ্রিল মাসে। তখন প্রতি লিটারে দাম বাড়িয়ে ১৬৭ টাকা করা হয়। এপ্রিল মাসের পরে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে সবার মধ্যে একধরনের শঙ্কা কাজ করছিল যে বাজারে তেলের দামে পরিবর্তন আসবে। দেশে সয়াবিন তেলের বিদ্যমান যে মজুত আছে, সেটাকে সন্তোষজনক উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি মজুতে কোনো ঘাটতি নেই।’
বাংলাদেশ এডিবল অয়েল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা হায়দার বলেন, ‘দেশে সয়াবিন তেলের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা ও আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে তা সমন্বয় করার জন্য আমরা বেশ কয়েক দিন ধরেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে একটি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।’
ব্রিফিংয়ের সময় বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে অন্যান্য পণ্যের বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়। জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাজারে সুনির্দিষ্টভাবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ ঘাটতি ও আলুর ক্ষেত্রে একটা সমস্যা দেখতে পাচ্ছি। এ ছাড়া চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে, ডিমের দাম তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমেছে, সামনে আরও কমে আসবে। অন্যান্য সবজির দামও কম।’
আলুতে (দাম নিয়ে) চূড়ান্ত অস্বস্তি বিরাজ করছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন আলু বাজারে আসতে আর চার সপ্তাহের মতো সময় লাগবে। ফলে এত দিন দুঃখজনকভাবে যাঁরা আলুর দাম বাড়িয়েছেন, তাঁদের মজুত ছাড়তে হবে। এর বাইরে আমরা একটাই পদক্ষেপ নিতে পারি, তা হলো আমদানি সহজ করা। সে কাজটি আমরা করেছি। কিন্তু ভারত থেকে খুব কম পরিমাণে আলু এসেছে। তাই নতুন আলু বাজারে আসার অপেক্ষা করা ছাড়া ভালো কোনো বিকল্প উপায় নেই।’