দেড় শ টাকায় উঠেছে চিনির দাম

চিনি

সরবরাহে ঘাটতির কারণে দুই সপ্তাহ ধরে চিনির দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাতে প্রতি কেজি চিনির দাম দেড় শ টাকা ছুঁয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকার মতো। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ নেই বললেই চলে। দাম হঠাৎ করে বেশি বাড়ার কারণে অনেক খুচরা বিক্রেতা খোলা চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।

গতকাল রোববার রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগেও বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। সেই চিনি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনির দাম রাখা হচ্ছে কেজি ১৫০ টাকা।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তাদের বাজারদরে চিনির একটি দাম উল্লেখ করে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি চিনি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগে এই দাম ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। সেই হিসাবে গত এক মাসে চিনির দাম বেড়েছে ৮ শতাংশের মতো। এক বছর আগের দামের সঙ্গে তুলনা করলে চিনির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ।

মালিবাগ বাজারের রশিদ স্টোরের স্বত্বাধিকারী আবুল বাসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিনির দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। এ জন্য চিনি বিক্রিই বন্ধ রেখেছি। চিনির দাম সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া আছে। বাড়তি দামে বিক্রি করলে সরকার জরিমানা করে।’

আগে যাঁরা খোলা চিনি কিনে রেখেছিলেন, তাঁরা এখন তা ১৪৫ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন। তবে যেসব বিক্রেতা গত দু-এক দিনের মধ্যে পাইকারি বাজার থেকে চিনি কিনেছেন, তাঁরা খুচরায় চিনি বিক্রি করছেন কেজি ১৫০ টাকা। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বাজার থেকে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) খোলা চিনি কিনতে হচ্ছে ৬ হাজার ৯০০ থেকে ৭ হাজার টাকায়। ফলে খোলা চিনির পাইকারি দামই পড়ছে কেজি ১৩৮ থেকে ১৪০ টাকা।

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো প্রথম আলোকে বলেন, মিল থেকে ঠিকমতো চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি বাজারে চিনির সরবরাহ কমার ফলে খুচরায় দাম বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার খুচরা বাজারে খোলা চিনি ১৩০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকায় বেঁধে দিয়েছে। গত ১৩ আগস্ট এই দাম নির্ধারণ করা হলেও বাজারে তা কখনোই কার্যকর হতে দেখা যায়নি। বরং চিনির দাম উল্টো বেড়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্প্রতি অপরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক প্রতি টনে দেড় হাজার টাকা কমিয়েছে। তবে সেই পদক্ষেপও কোনো ফল দেয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিনি পরিশোধনকারী একটি কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর জানামতে, দুটি চিনিকল কাঁচামাল সংকটে ভুগছে এবং তাদের উৎপাদন নেই বললেই চলে। তবে চিনিকল দুটির নাম প্রকাশ করতে তিনি রাজি হননি। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ডলার–সংকটে ঋণপত্র খুলতেও সমস্যা হচ্ছে। অন্যদিকে, বিশ্ববাজারেও চিনির দাম বাড়ছে। এ কারণে দেশে চিনির শুল্ক কমালেও তার প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে না।

দেশে প্রতিবছর চিনি আমদানি হয় ২০ থেকে ২২ লাখ টন। অন্যদিকে, স্থানীয় উৎপাদন ৩০ হাজার টনের মতো, যা মোট চাহিদার ১ শতাংশের কিছুটা বেশি। ফলে চিনির বাজার প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। আবার চিনি আমদানি করে অল্প কয়েকটি কোম্পানি। স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা দিতে অবশ্য চিনি আমদানিতে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ রয়েছে।