বাণিজ্য মেলা করা যাবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে
এখন থেকে দেশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা যাবে না। আর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া কোনো বিদেশি শিল্পী, মডেল বা সেলিব্রিটি কোনো মেলায় অংশ নিতে পারবেন না। মেলায় আমদানিনিষিদ্ধ বা অবৈধ কোনো পণ্য বিক্রি এবং অশালীন, অসামাজিক ও অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। এ ছাড়া ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কিছু প্রচার করা যাবে না।
স্থানীয় পর্যায়ে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের মাশুল (ফি) হবে দিনভেদে ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজনে মাশুল দিতে হবে ৩০০ থেকে ২ হাজার মার্কিন ডলার। যা দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১৫ টাকা ধরে) সাড়ে ৩৪ হাজার থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
এসব নির্দেশনার উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ‘মেলা পরিপত্র ২০২৪’ জারি করেছে, যা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের বিষয়ে নানা তথ্য–নির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে। পরিপত্রের অনুলিপি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), সব জেলা প্রশাসক (ডিসি), শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইসহ দেশের সব ব্যবসায়িক চেম্বারের কাছে পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ছাড়া দেশের কোনো জায়গায় কেউ মেলা আয়োজন করতে চাইলে আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। আর অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে কমপক্ষে দুই মাস আগে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পাশাপাশি বাণিজ্য মেলা ও স্থানীয় বাণিজ্য মেলার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে। বলা হয়েছে, দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও কমপক্ষে তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ থাকলেই তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হিসেবে গণ্য হবে। আর গ্রাম থেকে শুরু করে বিভাগীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশে পণ্য ও সেবা প্রদর্শন এবং বিক্রির ব্যবস্থা থাকলে সেটাকে বলা হবে বাণিজ্য মেলা। এ ছাড়া দেশের ভেতরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে আয়োজিত মেলাকে বলা হবে স্থানীয় বাণিজ্য মেলা। তবে দেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত মেলাকে বাণিজ্য মেলা বলা যাবে না। যেমন বৈশাখী মেলা, চৈত্রসংক্রান্তি মেলা, মহররমের মেলা, একুশে বইমেলা ও ঢাকা বইমেলা।
মেলা আয়োজনের মেয়াদ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে মাশুল, যা চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। আন্তর্জাতিক মেলার ক্ষেত্রে এক থেকে পাঁচ দিনের জন্য মাশুল হবে ৩০০ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া ৬ থেকে ১০ দিনের জন্য ৫০০, ১১ থেকে ১৫ দিনে ৭৫০, ১৬ থেকে ২০ দিনে ১ হাজার, ২১ থেকে ২৫ দিনে ১ হাজার ৫০০ এবং ২৬ থেকে ৩০ দিনের জন্য ২ হাজার ডলার মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাণিজ্য মেলার মাশুল হবে ১ থেকে ৫ দিনের জন্য ৫ হাজার টাকা। আর ৬ থেকে ১০ দিনের জন্য ১০ হাজার এবং দিনওয়ারি ১৫ হাজার, ২০ হাজার, ২৫ হাজার ও ৩০ হাজার টাকা মাশুল দিতে হবে।
যেসব নিয়ম ও শর্ত মানতে হবে
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা, স্থানীয় বাণিজ্য মেলা ও বাণিজ্য মেলা—এ তিন ধরনের জন্য আলাদা নিয়ম করা হয়েছে। ডিআইটিএফ ছাড়া দেশের কোনো জায়গায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা করতে চাইলে অনুমতির জন্য দুই মাস আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। সঙ্গে জমা দিতে হবে আবেদনকারীর হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর ও ভ্যাট পরিশোধের সনদ, মেলার স্থানসংক্রান্ত বরাদ্দপত্র এবং মাশুল চালানের কপি।
ইপিবি, চেম্বার অব কমার্স বা স্থানীয় প্রশাসনের মতামত নেওয়ার পর সন্তোষজনক মনে হলে তবেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেবে। জেলা পর্যায়ে মেলা করতে হলে ডিসির অনাপত্তিপত্র লাগবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়া স্থানীয় বাণিজ্য মেলার ক্ষেত্রে মাশুল জমা দেওয়ার এক মাস আগে আবেদন করতে হবে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, মেলা আয়োজনের অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সময় বাড়ানো যাবে না। কোনো কারণে মেলা আয়োজন করা সম্ভব না হলে নতুন করে আবেদন করতে হবে এবং মাশুলও দিতে হবে নতুন করে। মেলা আয়োজন করতে গিয়ে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।
পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, প্রশাসনকে জানিয়েই মেলা পরিচালনা করতে হবে ও মেলার আয়োজককে নিজ উদ্যোগে মেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। দেশীয় পণ্য বা দেশীয় পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত কোম্পানি অথবা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে, এমন মনে হলে সরকার মেলার অনুমতি বাতিল করবে।