আড়তে ডিমের সরবরাহ বেড়েছে, দামও কমেছে

ডিমফাইল ছবি

দুই দিন বন্ধ থাকার পর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পাইকারি আড়তে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ডিমের সরবরাহ। তবে সরকার নির্ধারিত দামে গতকাল মঙ্গলবার রাতেও সেখানে ডিম কেনাবেচা হয়নি, যদিও আগের তুলনায় দাম কমেছে।

তেজগাঁওয়ের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, গতকাল দিবাগত রাতে খামারিদের কাছ থেকে তাঁরা প্রতিটি ডিম ১২ টাকা করে কিনেছেন এবং তা বিক্রি করেছেন ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৩০ পয়সা দরে। এতে আজ বুধবার খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা বা তার চেয়ে সামান্য বেশি দরে। প্রতি ডজন ডিমের দাম পড়ছে ১৫৬ থেকে ১৬০ টাকা। অর্থাৎ গতকালের তুলনায় আজ ডিমের দাম ডজনপ্রতি ২০ টাকার মতো কমেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ সকালে শেওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে ১৬০ টাকা দরে ডিম বিক্রি হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় এর চেয়ে বেশি দামেও ডিম বিক্রি হচ্ছে। গতকালও বাজারে এক ডজন ডিম কিনতে ১৮০-১৯০ টাকা লেগেছে। যদিও সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, আজ বাজারে ১ ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬২-১৭৪ টাকা দরে (হালি ৫৪-৫৮ টাকা)।

সম্প্রতি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করে দেয়। নির্ধারিত দাম অনুসারে, প্রতিটি ডিমের দাম উৎপাদন পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা (ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা) হওয়ার কথা।

রাজধানীতে ডিমের অন্যতম বড় আড়ত তেজগাঁওয়ে। এই বাজারে গত রবি ও সোমবার রাতে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে তাঁদের ডিম ক্রয় ও বিক্রয় করতে হচ্ছে। এর ফলে তাঁরা সরকারি সংস্থার জরিমানা ও শাস্তির মুখে পড়ছেন।

পরে গতকাল ডিমের উৎপাদক, পাইকারি বিক্রেতা ও সরবরাহে যুক্ত অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এতে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী দুই সপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে ডিম উৎপাদক বড় কোম্পানি ও ছোট খামারিরা সরকার নির্ধারিত দামেই সরাসরি পাইকারি আড়তে ডিম পাঠাবে। এর মধে৵ কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। এর মাধ্যমে পাইকারি বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ডিম বিক্রি করবেন।

ভোক্তা অধিদপ্তর জানায়, বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমানোর লক্ষ্যে নতুন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজারে ডিমের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পর নতুন এ সিদ্ধান্ত হয়।

গতকাল রাতে খামারিদের কাছ থেকে এলেও ডিম উৎপাদক বড় কোম্পানিগুলো গতকাল তেজগাঁওয়ে ডিম সরবরাহ করেনি বলে জানান পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ বলেন, ‘বড় কোম্পানিগুলো আড়তে ডিম পাঠায়নি। তাদের সঙ্গে আজ সভা হয়েছে। আশা করছি, আজ (বুধবার দিবাগত) রাত থেকে বড় কোম্পানিগুলোর ডিম আমরা কিনতে পারব।’

এদিকে গতকাল রাতে খামারিদের কাছ থেকে ১২ টাকা দরে প্রতিটি ডিম কিনেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এই দাম উৎপাদক পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১ টাকা ৪২ পয়সা বেশি। পাইকারি বিক্রেতারা জানান, তাঁরা ১২ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৩০ পয়সা দরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ডিম বিক্রি করেন। এই দামও সরকার নির্ধারিত (পাইকারি পর্যায়ের) দামের চেয়ে ১ টাকা ১৯ পয়সা থেকে ১ টাকা ২৯ পয়সা বেশি।

অনেক খুচরা ব্যবসায়ী এর চেয়ে কিছুটা বেশি দরেও ডিম কিনেছেন বলে জানান। কারওয়ান বাজারের খুচরা ডিম বিক্রেতা রাফসান শেখ জানান, তিনি গতকাল রাতে তেজগাঁও থেকে ১২ টাকা ৪০ পয়সায় প্রতিটি ডিম কেনেন।

ডিমের বাড়তি দামের বিষয়ে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ বলেন, ‘ডিমের দাম বেড়ে যে অবস্থায় গিয়েছিল, সেখান থেকে যৌক্তিক দামে আসতে আরও দু-এক দিন সময় লাগবে। এটা এক দিনের মধ্যে ধরে বেঁধে কমানো সম্ভব নয়, যদিও উল্লেখযোগ্য হারে দাম কমছে। আমরা যত কম দামে কিনতে পারব, তত কম দামে বিক্রি করব।’