পেঁয়াজের আমদানি কম, দাম বাড়তি
বছরের এ সময়ে বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকে। তাতে আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যায়। তবে নির্ভরশীলতা বাড়লেও পেঁয়াজ আমদানি গত বছরের তুলনায় কম। এতে সরবরাহ কমে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।
খুচরা বাজারে এখন ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১১০ টাকা। আবার দেশি পেঁয়াজের দাম ১৩০ থেকে বেড়ে ১৫০ টাকায় উঠেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুম শেষে এখন বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে পেঁয়াজের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে। এ চাহিদার বিপরীতে উল্টো দেশি পেঁয়াজের জোগান কমছে। কৃষকের ঘরে এখন মজুত কমছে। আবার পেঁয়াজ আমদানিও বাড়েনি। এ সময় পেঁয়াজের আমদানি গত বছরের তুলনায় স্বাভাবিক থাকলে দাম খুব বেশি বাড়ত না।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদন অঞ্চলে বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হয়েছে। সেখানে দাম কিছুটা বাড়ায় দেশেও বেড়েছে। তবে ভারতের নাসিক জাতের পেঁয়াজের ফলন উঠবে আগামী মাসের মাঝামাঝি। তখন দামও সহনীয় পর্যায়ে আসবে। আগে আমদানি কম হলেও সামনে বাড়বে।
আমদানি কমেছে ৫৩ শতাংশ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, এ মাসের প্রথম ২৮ দিনে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৭৬ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার টন। এ হিসাবে চলতি মাসে পেঁয়াজ আমদানি গত বছরের তুলনায় ৩৪ শতাংশ কম।
চলতি মাসসহ গত প্রায় চার মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৪ লাখ ৭৯ হাজার টন। এ হিসাবে চার মাসে আমদানি কমেছে ৫২ শতাংশ।
চলতি মাসে পেঁয়াজ আমদানির ৯৪ শতাংশই এসেছে ভারত থেকে। ভারত ছাড়াও বাকি ৬ শতাংশ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে মিয়ানমার, মিসর, পাকিস্তান ও চীন থেকে। বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ সাড়ে চার হাজার টন।
ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি অর্থবছরের শুরুতে ডলার–সংকটে ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক সময়ের মতো ঋণপত্র খুলতে না পারায় পেঁয়াজ আমদানি কমে যায়। তবে দুই সপ্তাহ ধরে ডলার–সংকট নিয়ে জটিলতা নেই। তবুও শতভাগ মার্জিনে ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানিতে মার্জিন কমানো হলে আমদানি বাড়ত বলে তাঁরা মনে করেন।
জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি রোববার ১৬ লাখ টাকার ঋণপত্রের পুরো টাকা নগদ জমা দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছেন। প্রতি ডলারে দর রাখা হয়েছে ১২১ টাকা। পচনশীল পণ্যের জন্য মার্জিন কমানো হলে আমদানি আরও বাড়ত।
আমদানি মূল্যে হেরফের
চলতি মাসে ভারত থেকে পাঁচটি স্থলবন্দর দিয়ে ১ হাজার ৩১৪টি চালানে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এসব চালানে কেজিতে আমদানি মূল্য ছিল ৩৯ থেকে ৪১ সেন্ট পর্যন্ত। অর্থাৎ প্রতি কেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ আমদানি মূল্য ৪৯ টাকা। কেজিতে সরকার শুল্ক–কর পাচ্ছে ২ টাকা ৫১ পয়সা। এ হিসাবে শুল্ক–করসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য দাঁড়াচ্ছে ৫২ টাকা।
তবে কাগজপত্রে যে দরে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে, বাস্তবে মূল্য আরও বেশি। বিষয়টি নিয়ে তিনজন আমদানিকারক প্রথম আলোকে জানান, প্রতি কেজি পেঁয়াজের প্রকৃত আমদানি মূল্য ৬০ থেকে ৬৫ সেন্ট বা ৭২ থেকে ৭৮ টাকা। শুল্ক–কর ও পরিবহন খরচ মিলে তা দাঁড়াচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
খুচরা বাজারে এখন ভারতের বিকল্প মিসরের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এই পেঁয়াজ প্রতি কেজি আমদানি হয়েছে গড়ে ৪৩ সেন্ট বা ৫২ টাকায়। শুল্ক–করসহ খরচ পড়ছে প্রায় ৫৫ টাকা। পাইকারি বাজারে মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি।
‘আমদানি বাড়লে দাম আরও স্থিতিশীল থাকত’
পরিসংখ্যান ব্যুরো ও আমদানির হিসাবে, দেশে বছরে পেঁয়াজের সরবরাহ ও চাহিদা কমবেশি ৩০ লাখ টন। এর মধ্যে ৭০–৭৫ শতাংশ আসে দেশি উৎপাদন থেকে। আমদানি হয় ২৫–৩০ শতাংশ। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকে ডিসেম্বর থেকে আগস্ট পর্যন্ত। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে আমদানিনির্ভরতা বাড়তে থাকে। এ সময়ে আমদানি স্বাভাবিক থাকলে পেঁয়াজের বাজারে দামে অস্থিরতার সুযোগ থাকে না।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পচনশীল পণ্য বেচাকেনায় যুক্ত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিচ প্রথম আলোকে বলেন, বছরের এ সময়ে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা খুবই জরুরি। এখন ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে বলেই আমদানি করা পেঁয়াজের দামে খুব বেশি অস্থিরতা হয়নি। তবে আমদানি বাড়লে পেঁয়াজের দাম আরও স্থিতিশীল থাকত।
উৎপাদনস্থলেই বাড়ছে দাম
প্রথম আলোর ফরিদপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, দেশে উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরিদপুরেও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। ফরিদপুরে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত দেশি পেঁয়াজের মজুত কমে আসায় দাম বাড়ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা বাজার কর্মকর্তা শাহদাত হোসেন বলেন, আড়তে এখন দেশি পেঁয়াজের মজুত নেই, তবে কৃষকদের কাছে আছে। কৃষকের ঘরে জমানো পেঁয়াজের পরিমাণ কমে আসছে। তাঁরা এই পেঁয়াজ ধীরে ধীরে বাজারে তুলছেন।
সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের খোঁয়াড় গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মাফিকুল ইসলাম জানান, এবার দেশি পেঁয়াজের পচনের মাত্রা বেশি। এতে মজুত কমে আসছে।