কমেনি আলু-ডিমের দাম, বেড়েছে মুরগি ও পেঁয়াজের
রাজধানীর বাজারে আবারও বেড়েছে মুরগি ও পেঁয়াজের দাম। এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। কেজিতে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, টানা বৃষ্টিতে সরবরাহ কমার ফলে দাম বেড়েছে। বাজারে অন্যান্য পণ্যের দামে বড় কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি, তবে চাল, ডাল, ডিম, আলু ও সয়াবিনের মতো নিত্যপণ্যের দাম উচ্চমূল্যে মোটামুটি স্থির হয়ে আছে।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মালিবাগ, মগবাজার ও শাহজাহানপুর বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বৃষ্টির কারণে বাজারে মুরগির সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আর সে কারণেই এই মূল্যবৃদ্ধি। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজির দাম ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। বাজারে এই মুরগি গতকাল বুধবার বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়।
মালিবাগের মুরগি বিক্রেতা কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মুরগি আসছে কম, তাতে দাম একটু বেড়েছে। বৃষ্টিবাদল হলে কাঁচামালের দাম একটু বাড়ে। দু–এক দিন গেলে বোঝা যাবে বাজার কোনো দিকে যাচ্ছে।
এদিকে দেশি ও আমদানি করা—উভয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে বলে দেখা গেছে। ফলে দেশি পেঁয়াজের দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। দুই দিন আগেও আমদানি করা পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে সরকার গত ১৪ সেপ্টেম্বর যে তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল, তার একটি দেশি পেঁয়াজ। তবে দাম বেঁধে দেওয়ার পরও সরকার নির্ধারিত ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
শাহজাহানপুর বাজারের ফেনী জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আজহার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সরবরাহ কম থাকায় দু–তিন দিন হলো দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে। পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায়। তাতে এই পেঁয়াজ ৯০ টাকার ওপরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
সরকারি সংস্থার বাজারদরের হিসাবেও দেখা গেছে, বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৩ শতাংশ বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৪ শতাংশের মতো বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি ডিম ও আলুর দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। ডিমের ডজন ১৪৪ টাকায় নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আলুর খুচরা দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বেঁধে দেওয়া হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে মোটা, মাঝারি ও চিকন—কোনো চালের দাম কমেনি। ডালের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৬৯ টাকায়।
মাংসের দাম উঁচুতেই রয়ে গেছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা আর খাসির মাংসের দাম পড়ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা।
চাষের পাঙাশ ও তেলাপিয়া আকারভেদে ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। রুই মাছের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। ইলিশের মৌসুম শেষের দিকেও ১ কেজি আকারের ইলিশের দাম পড়ছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। পুরো মৌসুমজুড়ে ইলিশ এবার ক্রেতাদের নাগালের বাইরেই ছিল। মালিবাগ বাজারের মাছ বিক্রেতা আবদুল মাজেদ প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ এবার বাজারে এসেছে কম, তাই মৌসুমজুড়ে ইলিশের দাম বেশি ছিল।
সবজির বাজারেও স্বস্তি নেই। বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে, বেড়েছে অধিকাংশ সবজির দাম। গোল আকারের বেগুন কিনতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। লম্বা বেগুনের দাম একটু কম। ঝিঙা, ধুন্দুল ও চিচিঙ্গার মতো সবজির কেজি ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। সস্তার সবজি বলতে শুধু পেঁপে, কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। পটোল ও ঢ্যাঁড়সের দামও প্রতি কেজি ৫০ টাকার ওপরে। কাঁচা মরিচের কেজি পড়ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা।
রাজধানীর মৌচাকের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী আমিনুল ইসলাম মালিবাগ বাজারে সবজি কেনার সময় প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাছ-মাংসের দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখি না। আলু ও বেগুনের মতো সবজিও চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। তাতে আমাদের মতো নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য সংসার চালাতে বেশ কষ্ট হয়।’