২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মরিশাসভিত্তিক কোম্পানির মধ্য দিয়ে আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করেছেন বিনোদ আদানি

ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপপুঞ্জ মরিশাস অর্থ পাচারের স্বর্গভূমি ছিল। অনেক দিন ধরে তারা অবশ্য নিজেদের এই কুখ্যাতি দূর করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সম্প্রতি ভারতের গৌতম আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে আবারও এই মরিশাসের নাম উঠে এসেছে।

ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিনডেনবার্গ প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে গৌতম আদানি গোষ্ঠীর বাজার মূলধন ১৫৩ বিলিয়ন বা ১৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার কমে গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মরিশাসে ভুয়া কোম্পানি সংস্থা খুলে ঘুরপথে আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করেছেন গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানি। অভিযোগ, বিদেশে আদানি গোষ্ঠীর যাবতীয় লেনদেন সামলাতেন আড়ালে থাকতে পছন্দ করা এই বিনোদ আদানি। তাঁর কোম্পানির হাত ধরেই শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সেবির নিয়ম এড়িয়ে ভুয়া লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ ঢুকেছে ভারতে আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন কোম্পানিতে।

শুধু তা–ই নয়, হিনডেনবার্গের অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন শেয়ারে বিনিয়োগের বদলে রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২৪ কোটি ডলারের বেশি (প্রায় ১ হাজার ৯৮০ কোটি রুপি) ঋণ নিয়েছেন বিনোদ, যা ভারতীয় কর্তৃপক্ষগুলোকে জানানো হয়নি। আদানিরা অবশ্য আগেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে ৫০ বারের বেশি এসেছে গৌতম আদানির নাম। অথচ বিনোদ আদানির নাম এসেছে ১৫১ বার। তাঁর হাত ধরেই যে বিদেশে লেনদেন চলত, সে কথাও বলা হয়েছে। আর এবার অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোলসিমের ভারতীয় ব্যবসা কেনার ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা রয়েছে বিনোদ আদানির কোম্পানির।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিনোদ আদানির সম্পৃক্ততা আছে, এমন ৩৮টি কোম্পানি মরিশাসে নিবন্ধিত। এসব কোম্পানি আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কিনে কৃত্রিমভাবে মূল্যবৃদ্ধি করেছে। এর মধ্য দিয়ে আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারদর গত ৫ বছরে ২ হাজার ৬০০ শতাংশ বেড়েছে।

মরিশাসের দুই-তৃতীয়াংশ নাগরিক ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ফলে ভারতের সঙ্গে তাঁদের একধরনের সাংস্কৃতিক বন্ধন আছে।

১৯৯২ সালে অফশোর বিজনেস আইন পাস করে বিদেশি বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করে মরিশাস। সেই সঙ্গে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে একাধিক দ্বিপক্ষীয় কর চুক্তি সই করে তারা। এর মধ্য দিয়ে তারা অর্থের উৎস সম্পর্কে নামমাত্র ঘোষণা ও কর দিয়ে বিদেশিদের বিনিয়োগের সুযোগ দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের করপোরেট করহার ১৫ শতাংশ হলেও কার্যত তা ৩ শতাংশ।

গ্লোবাল ট্যাক্স জাস্টিস নেটওয়ার্কের তথ্যানুসারে, বিশ্বের ট্যাক্স হেভেন বা যেসব স্থানে সামান্য কর দিয়ে ব্যবসা করা যায়, এমন অঞ্চলগুলো দিয়ে যে পরিমাণ অর্থ প্রবাহিত হয়, তার ২ দশমিক ৩ শতাংশ যায় মরিশাস হয়ে। সবচেয়ে বেশি প্রবাহিত হয় ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ড দিয়ে—৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

কিন্তু মরিশাসকে ট্যাক্স হেভেন আখ্যা দেওয়া অন্যায্য বলে মনে করেন দেশটির অর্থমন্ত্রী মহেন কুমার সেরাতান। সম্প্রতি ভারত সফরে এসে এনডিটিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মরিশাস এমন কিছু করে না, যার কারণে কর ফাঁকি উৎসাহিত হয়। সে দেশেও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আছে। ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির সঙ্গে তাদের চুক্তি আছে। তার আলোকে দুই সংস্থা তথ্য বিনিময় করে।

সম্প্রতি সেবি ভারতের কোনো কোম্পানি সম্পর্কে মরিশাসের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে তথ্য চেয়েছে কি না, সে বিষয়ে অবশ্য কিছু বলেননি মহেন কুমার সেরাতান।
ভারতের শীর্ষ প্রবাসী ধনী বিনোদ আদানি

বিনোদ শুধু আদানি গোষ্ঠীর ব্যবসার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িতই নন, হুরুনের সমীক্ষা অনুসারে, প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই ধনীতম। এ ছাড়া আদানিদের বেশ কয়েকটি কোম্পানির জন্য ঘুরপথে অর্থ জোগাড়ের ব্যবস্থা করেছেন বিনোদ, যাঁর হাত ধরে বাধ্যতামূলকভাবে ২৫ শতাংশ শেয়ার প্রোমোটারদের বাইরের বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকার নিয়ম এড়াতে পেরেছে আদানি গোষ্ঠী।

এমনকি অস্ট্রেলিয়ায় কয়লাখনি প্রকল্প নিয়ে আলোচনার সময়ে বিনোদই যে মূল ভূমিকা পালন করেছেন, অর্থাৎ তিনিই যে আদানি গোষ্ঠীর বিদেশে লেনদেনের মূল হোতা, সে কথা জানিয়েছেন দেশটির এক বিশ্লেষক। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, হিনডেনবার্গ প্রতিবেদনের জেরের মধ্যে এই অভিযোগ নতুন বিতর্ক তৈরি করল।