২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ওষুধের কাঁচামাল শুল্কায়নে বাধা 

অভিযোগ উঠেছে, কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের বাধায় দেড় মাস ধরে আটকা এসেনসিয়াল ড্রাগসের কাঁচামালের ১৮টি চালান। 

বন্দরে পণ্য আসার পর শুল্কায়ন করে তিন-চার দিনের মধ্যে ওষুধের মতো জরুরি পণ্য খালাস হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সরকারি কোম্পানি এসেনসিয়াল ড্রাগস লিমিটেডের ওষুধের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি দেড় মাস ধরে পড়ে আছে বন্দরে। কারণ, এসব পণ্যের শুল্কায়ন করেনি কাস্টম হাউস। কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের বাধার মুখে কাস্টমস শুল্কায়ন করছে না বলে অভিযোগ করেছেন পণ্য খালাসে নিয়োজিত সরকারি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি।

কাঁচামাল হাতে না পাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালসহ কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরে পড়ে থাকায় আর্থিক ক্ষতিপূরণও গুনতে হচ্ছে।
সৈয়দ জহির উদ্দিন জামাল, মহাব্যবস্থাপক (ক্রয়), এসেনসিয়াল ড্রাগস লিমিটেড

আমদানি পণ্য খালাস ও রপ্তানি পণ্য জাহাজিকরণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের আমদানি করা পণ্য খালাসের কাজ পাওয়ার জন্য সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো নীতিমালার সর্বনিম্ন দরের চেয়ে কম দর দিয়ে কাজ পেয়ে আসছে। সংগঠনটির ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনেও বলা হয়, ২০২১ সালে ৫টি সরকারি কার্যালয়ের ২০টি এজেন্ট নীতিমালা ভঙ্গ করে দরপত্র জমা দেয়। তাদের জরিমানাও করা হয়। এখন জরিমানা না করে সরাসরি কাস্টম হাউস থেকে ফাইল সরিয়ে নিয়ে শুল্কায়নে বাধা দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম বলে পণ্য খালাসকারী এজেন্টরা জানান। 

শুল্কায়ন না হওয়ায় দেড় মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা সরকারি এই কোম্পানির কাঁচামালের চালানের স্তূপ বাড়ছে বন্দরে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ১৮টি চালানের ২৫ কোটি টাকার কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আটকে গেছে। প্রায় ৪ লাখ ৬২ হাজার কেজি পণ্যের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকসহ জীবন রক্ষাকারী ওষুধের কাঁচামাল।

এসেনসিয়াল ড্রাগস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (ক্রয়) সৈয়দ জহির উদ্দিন জামাল গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিত কাঁচামাল আমদানি করে ওষুধ উৎপাদন করে আসছে এই সরকারি ওষুধ কোম্পানি। কাঁচামাল হাতে না পাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালসহ কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বন্দরে পড়ে থাকায় আর্থিক ক্ষতিপূরণও গুনতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি খরচ সাশ্রয় ও ক্রয়বিধি অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত করা হয়েছে। 

এসেনসিয়াল ড্রাগস লিমিটেডের কাঁচামাল খালাসের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কাস্টমস এজেন্টস সেভারেল কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে গত নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি পণ্য খালাস ও পরিবহনের কাজ পায়। আগে এসেনসিয়াল ড্রাগস লিমিটেডের কাজ করত মেসার্স সাম সিন্ডিকেট (প্রা.) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এবার সর্বনিম্ন দরদাতা না হওয়ায় কাজ পায়নি তারা। কম দর দিয়ে নির্বাচিত হওয়া আপত্তি জানিয়ে সেভারেলের কাছে চিঠি দেয় কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। চিঠিতে বলা হয়, অ্যাসোসিয়েশনের নীতিমালার পরিপন্থী দর ও শর্তে চুক্তি হয়েছে। এ জন্য পণ্য খালাসে জটিলতা হলে তার দায়দায়িত্ব সেভারেলের ওপর বর্তাবে। চিঠিতে সই করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম। 

কাজী মাহমুদ ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পণ্য খালাসের কাজে নির্ধারিত ন্যূনতম দর ঠিক করা হয়েছে। নীতিমালা না মেনে দর দিয়ে নির্বাচিত হওয়ায় কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে কাস্টম হাউস থেকে শুল্কায়নের জন্য জমা দেওয়া ফাইল সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। 

জানা গেছে, সেভারেল চট্টগ্রাম থেকে ওষুধ কোম্পানির ঢাকার গুদামে পরিবহনের ন্যূনতম ভাড়ার দর দিয়েছে ট্রাকপ্রতি ন্যূনতম ৪ হাজার ৪৪৪ টাকা। কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নীতিমালা অনুযায়ী, ন্যূনতম পরিবহনভাড়া হতে হবে ১৫ হাজার টাকা। 

তবে সেভারেল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম সানাউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, শুল্কায়নের জন্য এক মাসের
বেশি সময় ধরে নির্ধারিত সেকশনে দায়িত্বশীল সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার কাছে আটটি চালানের ফাইল জমা দিয়েছেন তাঁরা। জমা দেওয়ার পর প্রতিবার অ্যাসোসিয়েশনের লোকজন ফাইলগুলো সরিয়ে নেয়। এ পরিস্থিতিতে আদালতে রিট করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বিষয়টি সুরাহার নির্দেশনা দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে। 

এ ব্যাপারে জানতে কাস্টমস কমিশনার ফাইজুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে কাস্টমসের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আদালত থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর অতিরিক্ত কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে।

সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কোম্পানি এসেনসিয়াল ড্রাগস সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা পর্যায়ের সব কমিউনিটি ক্লিনিক ও সরকারি সিভিল সার্জন অফিসে ওষুধ সরবরাহ করে থাকে। কাঁচামাল দ্রুত খালাস না হলে নতুন করে আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কোম্পানিটি।