১৬ ধরনের ব্যবসা নিয়ে নবযাত্রা শুরু করল ‘আকিজ বশির গ্রুপ’
আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সেখ আকিজ উদ্দিন মারা যাওয়ার পর আকিজ গ্রুপের ব্যবসায়িক উত্তরাধিকার হন তাঁর ১০ ছেলে। সেই ব্যবসার একটি বড় অংশ নিয়ে নতুন নামে যাত্রা শুরু করল ‘আকিজ বশির গ্রুপ’। বাবার নাম ও নিজের নাম যুক্ত করে নতুন এ গ্রুপের নামকরণ করেছেন আকিজ উদ্দিনের ছেলে সেখ বশির উদ্দিন।
এত দিন সেখ বশির উদ্দিন উত্তরাধিকার সূত্রে আকিজ গ্রুপের ব্যবসা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন সেখান থেকে আলাদা হয়ে বাবার ও নিজের নামে নিজের মালিকানায় নতুন নামে ব্যবসা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন। এখন থেকে নতুন এ নামেই ব্যবসা পরিচালনা করবেন সেখ বশির উদ্দিন। গতকাল রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রুপটির নবযাত্রার ঘোষণা দেওয়া হয়।
আমার বাবার প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু তিনি জীবনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন। আজও বাবার সেই শিক্ষায় প্রভাবিত হয়ে আমাদের ব্যবসা চলছে। আর আজ মায়ের উপস্থিতিতে নতুন নামে ব্যবসার যাত্রা শুরু করতে পেরে আমি আনন্দিত। তবে আমাদের ব্যবসার সবকিছুর কৃতিত্ব বাবা সেখ আকিজ উদ্দিনের।’সেখ বশির উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আকিজ বশির গ্রুপ
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আকিজ বশির গ্রুপের অধীনে রয়েছে সিরামিকস, স্যানিটারি ও বাথওয়্যার, টেবিলওয়্যার, পার্টিকেল বোর্ড, পাট, স্টিল, চা-সহ ১৬ ধরনের ব্যবসা। বছরের এসব ব্যবসার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার। নতুন গ্রুপের নবযাত্রার এ ঘোষণা অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন হাজির হন তাঁর বাবা সেখ আকিজ উদ্দিনের ব্যবহৃত ভেসপা মোটরসাইকেলে করে মাকে সঙ্গে নিয়ে। এ সময় তিনি জানান, নতুন এ গ্রুপের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন তাঁর মা মনোয়ারা বেগম।
১০ ভাইয়ের মধ্যে ব্যবসার নৈতিকতার বীজ তাঁর বাবা বুনে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে সেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবার প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা খুব বেশি ছিল না। কিন্তু তিনি জীবনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নিয়েছিলেন। আজও বাবার সেই শিক্ষায় প্রভাবিত হয়ে আমাদের ব্যবসা চলছে। আর আজ মায়ের উপস্থিতিতে নতুন নামে ব্যবসার যাত্রা শুরু করতে পেরে আমি আনন্দিত। তবে আমাদের ব্যবসার সবকিছুর কৃতিত্ব বাবা সেখ আকিজ উদ্দিনের।’
অনুষ্ঠানে গ্রুপের চেয়ারম্যান মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি চাই আমার সব সন্তান সফলতা অর্জন করুক। তবে কোনো ছেলে তো একা ব্যবসার সবকিছু সামলাতে পারবে না। এ জন্য যেসব কর্মী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাঁরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পরিশ্রম করে ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমি আমার ছেলেসহ সবার জন্য দোয়া করি, যেন সবাই সুস্থ থাকেন।’
আমি চাই আমার সব সন্তান সফলতা অর্জন করুক। তবে কোনো ছেলে তো একা ব্যবসার সবকিছু সামলাতে পারবে না। এ জন্য যেসব কর্মী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তাঁরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পরিশ্রম করে ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমি আমার ছেলেসহ সবার জন্য দোয়া করি, যেন সবাই সুস্থ থাকেন।’মনোয়ারা বেগম, চেয়ারম্যান, আকিজ বশির গ্রুপ
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে সেখ বশির উদ্দিন তাঁর মায়ের কাছে বাবা আকিজ উদ্দিনের ভেসপা মোটরসাইকেলে করে ব্যবসায়িক বিভিন্ন কাজ ও তিনি এই ভেসপা নিয়ে কতবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, তা জানতে চান। তখন মনোয়ারা বেগম বলেন, তিনি ব্যবসা নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতেন। আর ভেসপাটি নিয়ে সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ বারের মতো তিনি (আকিজ উদ্দিন) দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। মায়ের মুখে এ তথ্য শোনার পর সেখ বশির উদ্দিন সবাইকে সাবধানে রাস্তায় চলাচলের পরামর্শ দেন।
আকিজ এই গ্রুপ থেকে বেরিয়ে পৃথক নামের ব্যবসা পরিচালনার বিষয়ে সেখ বশির উদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সব ভাইয়ের ব্যবসাই এখন বড় হচ্ছে। বাবার পর দ্বিতীয় প্রজন্ম হিসেবে আমরা ব্যবসার হাল ধরেছি। এখন আমাদের সন্তানেরাও ব্যবসা দেখাশোনা শুরু করেছে। তৃতীয় প্রজন্মের নেতৃত্বে আসার এই সময়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতৃত্বের ছাপ রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
বশির উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, এর ফলে ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী হবে। ভবিষ্যতে অন্য ভাইয়েরাও হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নেবেন। তাতে বাবার স্মৃতি অক্ষুণ্ন রেখে সবাই ব্যবসা আধুনিকায়নের ব্যাপারে গুরুত্ব দেবেন বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বশির উদ্দিনের বড় ভাই, আকিজ এফএমসিজি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শেখ আজিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সব ভাই বাবার ব্যবসার ঐতিহ্য ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। এই যাত্রার নানা সময়ে নানা বৈচিত্র্য এসেছে, এটা তারই একটা অংশ। আশা করি, বাবার সুনাম অক্ষুণ্ন রেখে আকিজ বশির গ্রুপ ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে।’
অনুষ্ঠানে বশির উদ্দিনের আরেক ভাই সেখ আমিন উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। আকিজ বশির গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাজী খালিদ মাহমুদ, এম আর জামিল, হোসাইন ইরাজ, মো. খোরশেদ আলম ও দিলরুবা শারমিন খান প্রমুখ।
একনজরে সেখ আকিজ উদ্দিন ও আকিজ গ্রুপ
জন্ম ১৯২৯, মৃত্যু ২০০৬।
কিশোর বয়সে কলকাতার হাওড়া স্টেশনে কমলালেবু বিক্রি করে ব্যবসা শুরু।
এখন আকিজের সিমেন্ট, সিরামিক, খাদ্যপণ্য, বস্ত্রকল, পাট, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, পার্টিকেল বোর্ড, প্লাস্টিক, জাহাজে পণ্য পরিবহন, চা-বাগান, কৃষিভিত্তিক শিল্পসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে।
গ্রুপের অধীনে রয়েছে ২৬টি কোম্পানি। কাজ করেন ৩৫ হাজার কর্মী।