শেয়ারবাজারে লভ্যাংশের দ্বৈত কর উঠে যাবে কি

করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি দ্বৈত করের অবসান চান বিনিয়োগকারীরা। সঙ্গে ভালো কোম্পানি আনার উদ্যোগেরও প্রত্যাশা তাঁদের।

শেয়ারবাজার
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরাও এখন তাকিয়ে আছেন বাজেটের পানে। বাজেট ঘিরে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশাও অনেক। আবার বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাওয়াও কম নয় এ বাজেটে। তাই বাজেটের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করছে বাজেট-পরবর্তী বাজারের ভবিষ্যৎ। আগামী সপ্তাহেই বাজেটের সেই প্রভাব দেখা যাবে বাজারে।

এমনিতেই বেশ কিছুদিন ধরে মন্দাভাব চলছে। বাজেট সামনে রেখে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশাবাদী হওয়ায় মন্দাভাব কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। তবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা রয়েছেন এখনো দোলাচলে। শেয়ারবাজারের জন্য শেষ পর্যন্ত বাজেটে কী থাকছে—এই বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এখন প্রবল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য কী থাকছে, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন সংসদে। বেলা তিনটার পর এ বাজেট উপস্থাপিত হবে।

এবারের বাজেট সামনে রেখে বিনিয়োগকারীদের প্রধান চাওয়া করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা। বর্তমানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে শেয়ারবাজারে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়করমুক্ত। করমুক্ত লভ্যাংশ আয়ের সীমা বাড়ানোর পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশের ক্ষেত্রে উৎসে কাটা করকে চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে বিবেচনারও দাবি শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। যুক্তি হিসেবে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে মূলধনি মুনাফা পুরোপুরি করমুক্ত। কিন্তু নগদ লভ্যাংশের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ বিতরণের আগে কর কেটে রাখে। এ ক্ষেত্রে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন থাকলে ১০ শতাংশ হারে এবং টিআইএন না থাকলে ১৫ শতাংশ হারে কর কেটে রাখে কোম্পানিগুলো।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়করমুক্ত হলেও কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে ১০ বা ১৫ শতাংশ কর কেটে রেখে তারপর বাকি টাকা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করে। যদিও বছর শেষে রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে এ কর সমন্বয়ের সুযোগ রয়েছে। তবে যাঁদের করমুক্ত আয় নেই, তাঁরা রিটার্নে এ সমন্বয়ের সুযোগ পান না। ফলে অনেক বিনিয়োগকারী ৫০ হাজার টাকার কম লভ্যাংশ পেলেও তাঁদের কাছ থেকে ঠিকই কর কেটে রাখা হয়, রিটার্নে তাঁর এ কর সমন্বয়ের সুযোগ থাকে না।

আবার লভ্যাংশের ক্ষেত্রে উৎসে কাটা কর চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে বিবেচিত না হওয়ায় ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নগদ লভ্যাংশ গ্রহণের ক্ষেত্রে খুব বেশি আগ্রহী হন না। কারণ, কেউ যদি ১ লাখ টাকা নগদ লভ্যাংশ পান, তবে শুরুতে তাঁর কাছ থেকে ১০ বা ১৫ শতাংশ হারে কর কেটে রাখা হয়। পরে ওই লভ্যাংশের অর্থ যখন বছর শেষে রিটার্নে আয় হিসেবে দেখানো হয়, তখন অনেকের আয় করমুক্ত আয়সীমা অতিক্রম করে। তাতে তাঁদের নির্ধারিত হারে আবার কর দিতে হয় ওই লভ্যাংশের ওপর। কিন্তু যদি সমপরিমাণ আয় শেয়ার বিক্রি থেকে আসে, তখন ওই আয় মূলধনি মুনাফা হিসেবে করমুক্ত সুবিধা পায়। তাই প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা নগদ লভ্যাংশের বদলে মূলধনি আয় বা মুনাফায় বেশি আগ্রহী। এ কারণে বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে লভ্যাংশের ক্ষেত্রে উৎসে কাটা করকে চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে বিবেচনার দাবি বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

এ বিষয়ে হিসাববিদদের সংগঠন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ বা আইসিএবির সাবেক সভাপতি মাহমুদ উল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নগদ লভ্যাংশের ক্ষেত্রে উৎসে কেটে রাখা করকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা হলে তাতে বাজারে নতুন বিনিয়োগ বাড়বে। পাশাপাশি নগদ লভ্যাংশ গ্রহণের ক্ষেত্রে সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীর মধ্যে আগ্রহ তৈরি হবে।

এ ছাড়া চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়। তবে সেটি ২৫ শতাংশ নিয়মিত কর ও তার ওপর ৫ শতাংশ হারে জরিমানা আরোপ করে এ সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ খুব বেশি কাজে আসেনি। এবারও কি কালোটাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ থাকবে—এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের রয়েছে আগ্রহ।

জানতে চাইলে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন কোম্পানির করপোরেট কর হারের ব্যবধান বাড়ানো উচিত। তাতে শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। এ ছাড়া নগদ লভ্যাংশের ওপর থেকে দ্বৈত কর পরিহার করলে তাতে ভালো সুফল মিলবে বাজারে।