বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত
মধ্যবিত্তের ওপর করের বোঝা আরও বাড়বে
ধনী–গরিবনির্বিশেষে সব করদাতা বিনিয়োগকৃত অর্থের ১৫ শতাংশ হারের সমপরিমাণ কর রেয়াত পাবেন।
বিনিয়োগের আনুপাতিক পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ায় করদাতাদের আগের চেয়ে বেশি কর দিতে হবে।
করের বোঝা মধ্যবিত্তের ওপরেই বেশি পড়ে। তাই তাঁদের অনেকেই সঞ্চয়ের টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনে কর কমানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নতুন বাজেটে এই সুবিধা কমিয়ে দিয়েছেন, যা উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কারণ, মধ্যবিত্তরা এবারে বিনিয়োগ নিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়বেন।
এখন থেকে কর রেয়াতের জন্য আগের মতো মোট আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে না। আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে এই বিনিয়োগসীমা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে করদাতাদের বিনিয়োগের সুবিধা কমল। আর ধনী–গরিবনির্বিশেষে সব করদাতা বিনিয়োগকৃত অর্থের ১৫ শতাংশ হারের সমপরিমাণ কর রেয়াত পাবেন। এটাই এবারের বাজেটের বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের নতুন প্রস্তাব।
কর রেয়াতের জন্য আগের মতো মোট আয়ের ২৫% পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে না। নতুন বাজেটে তা কমিয়ে ২০% করা হয়েছে।
মনে রাখতে হবে, যে বছর বিনিয়োগ করা হয়, সে বছরই শুধু কর ছাড় পাওয়া যায়। পরবর্তী বছর বা বছরগুলোতে আর কর ছাড় মিলবে না। প্রতিবছর ১ জুলাই থেকে পরের বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আয়ের ওপর যে বিনিয়োগ করা হয়, তা রিটার্ন ফাইলে দেখিয়ে কর ছাড় নেওয়া যায়।
বিনিয়োগের আনুপাতিক পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ায় করদাতাদের আগের চেয়ে বেশি কর দিতে হবে। কারণ, ওই করদাতা এখন আয়ের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন না। এখন এই সীমা আয়ের ২০ শতাংশ। ফলে বাকি ৫ শতাংশ আয়ের ওপর কর বসবে।
একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আপনি ১০ লাখ টাকা উপার্জন করেছেন। বাসাভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসাসহ বেশ কিছু খাতে ছাড় হিসাব করে এটাই ছিল আপনার করযোগ্য আয়। সংসার খরচ ও ঈদের বোনাসের টাকা বাঁচিয়ে আপনি দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। এ ছাড়া আপনার বেতন থেকে প্রতি মাসে হিসাব করে ৫০ হাজার টাকার অফিসের ভবিষ্য তহবিলে বা প্রভিডেন্ট ফান্ডে রেখেছেন। সব মিলিয়ে আপনি আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। আপনি যদি সঞ্চয়পত্র না কিনতেন বা প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা না রাখতেন, তাহলে গত বছর আপনার কর হতো ৮০ হাজার টাকা।
কিন্তু আপনি বিনিয়োগ করেছেন মোট আয়ের ২৫ শতাংশ বা আড়াই লাখ টাকা। এই টাকার ওপর ১৫ শতাংশ হারে বা সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা কর রেয়াত পেয়েছেন। আপনি সাড়ে ৪২ হাজার টাকা কর দিয়েছিলেন।
চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরেও যদি আপনি একই পরিমাণ আয় করেন, তাহলে আপনি আড়াই লাখ টাকার পরিবর্তে দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। এ জন্য আপনি ১৫ শতাংশ হারে কর রেয়াত পাবেন ৩০ হাজার টাকা। আপনার কর রেয়াত কমল আগেরবারের চেয়ে সাড়ে সাত হাজার টাকা। আপনি গতবার কর দিয়েছিলেন সাড়ে ৪২ হাজার টাকা। এবার দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা। এর মানে, বিনিয়োগ–সুবিধা কমিয়ে দেওয়ায় আপনার করের বোঝা বাড়ল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ছাড় নেওয়ার জন্য নয়টি খাত ঠিক করে দিয়েছে। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে কর ছাড় পাওয়া যায়, এটা কমবেশি সব সচেতন করদাতা জানেন। বাকি খাতগুলো হচ্ছে—পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চার ক্রয়; জীবনবিমার প্রিমিয়াম; সরকারি কর্মকর্তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিলের চাঁদা; স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাঁদা; কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠীবিমার তহবিলে চাঁদা; সরকার অনুমোদিত ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ এবং সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ডে চাঁদা প্রদান। এ ছাড়া ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ডিপিএস করলেও কর রেয়াত পাবেন। এসব পেনশন স্কিমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার ওপর এই কর ছাড় পাওয়া যায়।