বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের তিনটি শর্তই পূরণ করেছিল। বলা যায়, সব দিক থেকেই ভালো অবস্থানে ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ এসে সব এলোমেলো করে দিল। এর সঙ্গে কিছু কাঠামোগত সমস্যা আছে। বিশেষ করে কোভিডের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটানো উচিত হবে কি না। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ উত্তরণের সময় দুই বছর বাড়ানোর আবেদন করেছে, অর্থাৎ ২০২১ সালে বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করলেও ২০২৪ সালের বদলে ২০২৬ সালে উত্তরণ ঘটবে। এটা আমি যৌক্তিক মনে করি।
উত্তরণ হলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা হারাবে। তবে এ ক্ষেত্রে আমরা তৈরি পোশাক খাত নিয়ে যতটা চিন্তিত, অন্যান্য খাত নিয়ে অতটা চিন্তিত নই। কিন্তু চ্যালেঞ্জ আরও অনেক ক্ষেত্রেই আছে।
এ রকম ঘটনা এবারই প্রথম নয়, এর আগে নেপাল ও মালদ্বীপ সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিল। ভূমিকম্পের কারণে নেপাল এবং সুনামির কারণে মালদ্বীপ এই আবেদন করেছিল।
তবে শুধু সময় বাড়ালেই চলবে না, এই সময়টা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। এখন তো আমরা সবাই উত্তরণকালীন কৌশলের কথা বলছি, উত্তরণের পর কী ঘটবে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। উত্তরণের পরও কিছুদিন সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখা যায় কি না, সেটা দেখতে হবে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব তহবিল আসছে, সেগুলো একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত অব্যাহত রাখা যায় কি না, সে চেষ্টাও করতে হবে। কীভাবে তা করা যায়, সেটাই এখন আলোচনার মূল বিষয়। বিষয়টি সব সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে রাখতে হবে।
এই অঞ্চলে বাংলাদেশের যে ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি, এসব বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন সামনের কাতারে। ফলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যায়, সেটা দেখার বিষয়। তবে বাংলাদেশ এখন নেতৃত্বের আসনে।
শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য দেশগুলোও এখন সময় বাড়ানোর আবেদন করতে পারে। ফলে এদের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হয়, সেটাও আমাদের দেখতে হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (ইউএনসিডিপি) পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই ঠিক হবে, প্রতিটি দেশের জন্য আলাদা আলাদাভাবে মেয়াদ বাড়ানো হবে, নাকি সবার আবেদন একসঙ্গে অনুমোদন করা হবে। আমি মনে করি, সেখানেই বাংলাদেশের সুযোগ। এই অঞ্চলে বাংলাদেশের যে ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি, এসব বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন সামনের কাতারে। ফলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যায়, সেটা দেখার বিষয়। তবে বাংলাদেশ এখন নেতৃত্বের আসনে।
এই বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক সমর্থন ও উন্নয়নকৌশল পুনর্বিবেচনা করতে হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হচ্ছে, এসডিজি বাস্তবায়নের কৌশল পুনর্বিবেচিত হচ্ছে, পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা হচ্ছে—এগুলোর সমন্বয় এই মুহূর্তে জরুরি। একসঙ্গে এতগুলো পরিকল্পনা চলমান থাকলে সমন্বয়ের অভাব হয়। অন্যদিকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেমন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জড়িত, তেমনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগও (ইআরডি) জড়িত। এদের মধ্যে সমন্বয় খুব জরুরি।
উত্তরণ হলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা হারাবে। তবে এ ক্ষেত্রে আমরা তৈরি পোশাক খাত নিয়ে যতটা চিন্তিত, অন্যান্য খাত নিয়ে অতটা চিন্তিত নই। কিন্তু চ্যালেঞ্জ আরও অনেক ক্ষেত্রেই আছে। উত্তরণের পর ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্ব আইন কার্যকর করতে হবে, কৃষি থেকে ভর্তুকি তুলে নিতে হবে—এসবও আমাদের জন্য বড় সমস্যা। এগুলো আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব, তা এখনই ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া আয়ভিত্তিক ঋণ পাওয়ার সুযোগ আছে, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে রেয়াতি সুদে আমরা ঋণ নিতে পারি, সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে হবে।
শুধু সময় বাড়ালেই চলবে না, এই সময়টা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। এখন তো আমরা সবাই উত্তরণকালীন কৌশলের কথা বলছি, উত্তরণের পর কী ঘটবে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। উত্তরণের পরও কিছুদিন সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রাখা যায় কি না, সেটা দেখতে হবে।
কথা হচ্ছে, বাণিজ্য থেকে শুরু করে কৃষি ভর্তুকি—উত্তরণের পর সবকিছুর মেয়াদই যৌক্তিক সময় পর্যন্ত বাড়াতে হবে।
নিউইয়র্কে যখন এই উত্তরণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, অন্যদিকে তখন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্য আলোচনা চলছে। আরেক দিকে আছে ব্রেক্সিট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে গেল। অর্থাৎ সব বৈশ্বিক প্রচেষ্টা এক দিকে ধাবিত হচ্ছে না। ফলে এই জটিল পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তার কৌশল প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের দিকে এগোতে হবে। তবে কৌশল প্রণয়নে বাংলাদেশ অত্যন্ত দক্ষ। এখন দরকার বাস্তবায়ন।