আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের টাকা ফেরত দিতে চান না ব্যবসায়ীরা। কারণ, বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক অস্থিরতায় জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। সার্বিকভাবে আমদানি-রপ্তানির খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে মূল্যস্ফীতির হার। তাই শিল্পকারখানা ভালো অবস্থায় নেই, এমনটা দাবি করে ঋণের টাকা পরিশোধে আরও সময় চেয়েছে দেশের ব্যবসায়ী–শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে বৈঠককালে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল এই দাবি জানায়। বাংলাদেশ ব্যাংকে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই সভায় ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের ও কাজী ছাইদুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী, এমসিসিআইয়ের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণ পরিশোধে বাড়তি সময়, ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে ঋণ পুনঃ তফসিলীকরণসহ নানা সুবিধা চেয়েছে এফবিসিসিআই। এ ছাড়া রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে তারা। আমরা বলেছি, রপ্তানি আয় সময়মতো আনলে তহবিলের আকার কোনো সমস্যা নয়। অন্য দাবিগুলো আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি।’
সভা শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের যে ঋণ আছে, সেগুলো পরিশোধের জন্য আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছি, যাতে খেলাপি না হয়। এ ছাড়া বর্তমানে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার ৭০০ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার অনুরোধ জানিয়েছি। কারণ, পণ্যের কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বিল প্রত্যাবাসনের সময় বাড়ানোর দাবি করেছি আমরা। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে পণ্য রপ্তানির পর অর্থ আসতে বিলম্ব হচ্ছে।’
গভর্নরের কাছে শিল্পকারখানার জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের দাবি জানিয়েছেন জসিম উদ্দিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে আগে শিল্পকারখানায় দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস) ছিল। এগুলো এখন নেই। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের বড় বড় শিল্পকারখানা করা দরকার। তবে বড় শিল্প করতে সাধারণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে পরিশোধ করা কঠিন। তাই বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছি, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ১০-১৫ শতাংশের একটি তহবিল দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য রাখা হোক। আর সেখানে পুনঃ অর্থায়ন তহবিল দিয়ে সহায়তা করুক কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’
খেলাপি ঋণের বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৯ শতাংশের কাছাকাছি। এখন সেটি বেড়ে প্রায় ১৪ শতাংশ হয়েছে। তখন যদি ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানো হতো, তাহলে পরিমাণটি বাড়ত না। আমি মনে করি, এটা ব্যাংকের জন্য ভালো, আবার গ্রাহকদের জন্যও ভালো।’
ডলার–সংকটে শঙ্কার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের যে রিজার্ভ আছে, সেটি খারাপ নয়। ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের মতো রিজার্ভ আছে। আমি মনে করি, আমাদের শঙ্কার কিছু নেই। সমস্যা আছে, সমাধান হয়ে যাবে। আমরা এগুলো নিয়েই এগিয়ে যাব। আমি মনে করি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইতিবাচকভাবেই চলছে।’