৩৩ বছর পর এম এন লারমার জন্য সংসদে শোক
মৃত্যুর ৩৩ পর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা ও সাবেক সাংসদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ওপর শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করেছে জাতীয় সংসদ।
আজ রোববার দশম জাতীয় সংসদে দ্বাদশ অধিবেশনের প্রথম দিনের বৈঠকের শুরুতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করলে তা গৃহীত হয়।
শোকপ্রস্তাবে বলা হয়েছে, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এম এন লারমা) ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার খেদারছড়ার থুম এলাকায় ‘বিভেদপন্থী গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্র’ নামের একটি সশস্ত্র গ্রুপের আক্রমণে নিহত হন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৪ বছর। স্বতন্ত্র হিসেবে তিনি ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের এবং ১৯৭৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে স্বতন্ত্র সাংসদ নির্বাচিত হন। এম এন লারমা জনসংহতির বর্তমান নেতা সন্তু লারমার বড় ভাই।
৩৩ বছরে পরে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করার কারণ সম্পর্কে সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখার পরিচালক মোতাহের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী কোনো সাংসদ মারা গেলে তা সংসদের পরের অধিবেশনের প্রথম দিনে শোকপ্রস্তাব আকারে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এম এন লারমা মারা যাওয়ার পর কোনো শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। যে কারণে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি সংসদের নথিতে নেই। বিষয়টি সংসদের নজরে আনেন রাঙামাটির স্বতন্ত্র সাংসদ উষাতন তালুকদার। পরে এই অধিবেশনে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি শোকপ্রস্তাব আকারে গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
শোকপ্রস্তাবে বলা হয়েছে, এম এন লারমা ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর থানার মাহাপুরমে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে রাঙামাটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৬৫ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বিএড এবং ১৯৬৯ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে ১৯৬৬ সালে তিনি দীঘিনালা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম রেলওয়ে কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৬৯ সালে আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম বার অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেন।
এম এন লারমার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৬৫ সালে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে। ১৯৫৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে তাঁর উদ্যোগে পাহাড়ি ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন করে এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এই সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৯৭৩ সালে। এরপর এম এন লারমা ১৯৭৫ সালে বাকশালে যোগদান করেন। তবে ১৯৭৭ ও ১৯৮২ সালে তিনি জনসংহতি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
রেওয়াজ অনুযায়ী শোকপ্রস্তাবের একটি অনুলিপি এম এন লারমার পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠানো হবে।
এ ছাড়া সাবেক সাংসদ ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য আবদুর রহিম, সাবেক সাংসদ আবদুল মান্নান, আলী রেজা রাজু, কুরবান আলী, ফজলুর রহমান পটল ও আবদুর রাজ্জাক খানের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া কবি শহীদ কাদরী, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজমা রহমান, মুক্তিযোদ্ধা শিরিন বানু মিতিল, কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী, মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু সিডনি শনবার্গ, কৌতুক অভিনেতা ফরিদ আলীসহ প্রমুখের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।