হাতুড়ি পিটিয়ে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার দিকেই ঝোঁক

বিজিএমইএ ভবন । প্রথম আলো ফাইল ছবি
বিজিএমইএ ভবন । প্রথম আলো ফাইল ছবি
>

• চলতি মাসেই ভবন ভাঙা শুরু হতে পারে
• ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা হয়েছে
• ভাঙার পদ্ধতি নিয়ে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি
• ভাঙার খরচ বহন করবে বিজিএমইএ

হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার কাজ এ মাসেই শুরু হতে পারে। সনাতন না সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে ভাঙা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ইতিমধ্যেই যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে ভবন ভাঙার জন্য হাতুড়ি পিটিয়ে বা সনাতন পদ্ধতির দিকেই ঝোঁক বেশি।

দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তও করা হয়েছে। ভাঙা বাবদ ঠিকাদার রাজউককে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা দেবে। আর সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে ভাঙা হলে খরচ হবে ১৩ কোটি টাকা। ভাঙার খরচ বহন করবে বিজিএমইএ। রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য পাওয়া যায়।

যোগাযোগ করা হলে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, কোন পদ্ধতিতে ভাঙা হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। যেহেতু এটি একটি বড় বিষয়, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অবৈধ ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙতে চলতি বছরের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেন আদালত। গত ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে ভবনটির বিভিন্ন কার্যালয় সিলগালা করে দেয় রাজউক। বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে দরপত্র আহ্বান করে গত ১৭ ডিসেম্বর (রাজউক) সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেয়। দরপত্র জমা দেওয়া পাঁচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স, ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ, পি অ্যান্ড এস এন্টারপ্রাইজ, চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ এবং সামিয়া এন্টারপ্রাইজ। এদের মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার সর্বোচ্চ দরদাতা হয় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স।

রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানকেই প্রথম সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে সর্বাধুনিক বা নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকের মাধ্যমে (কন্ট্রোলড ডিমোলিশন) ভাঙা হলে ভবনের রড, বাথরুম ফিটিংসসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী কাজে লাগানো যাবে না। এ বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। যেভাবেই ভাঙা হোক, কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে না, এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।

রাজউক চেয়ারম্যান আরও বলেন, নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকের সাহায্যে যদি এই ভবন ভাঙতে হয়, তাহলে খরচ হবে কমপক্ষে ১৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের মার্চে এ বিষয়ে রাজউকের সঙ্গে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের কথাও হয়। ভবনের বিভিন্ন অংশে শক্তিশালী বিস্ফোরক বসিয়ে মুহূর্তের মধ্যে ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটি রাজউকের কাছে ১৫ কোটি টাকা চেয়েছিল। পরে ১৩ কোটি টাকায় প্রতিষ্ঠানটি রাজি হয়। কত মাসে পুরো এলাকা পরিষ্কার করা হবে, তা নির্ধারণ করে যথাসময়ে বিষয়টি চূড়ান্ত করার কথাও হয়েছিল।

বিজিএমইএ ভবনের বিষয়ে আদালতের আদেশ ছিল, রাজউক ভবনটি ভাঙবে, খরচ বহন করবে বিজিএমইএ। সর্বাধুনিক পদ্ধতি কাজে লাগানো না হলে বিজিএমইএকে ১৩ কোটি টাকা দিতে হবে না। এ বিষয়ে বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী বিজিএমইএ অবশ্যই খরচ বহন করত। তবে ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিস্ফোরক ব্যবহার করা হলে পরিবেশগত ক্ষতির প্রচুর আশঙ্কা থাকবে।

১৬তলা বিজিএমইএ ভবন সনাতন পদ্ধতিতে ভাঙার বিষয়ে যুক্তি দেখিয়ে হাতিরঝিলের অন্যতম প্রকল্প পরিচালক, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী রায়হানুল আবেদীন বলেন, ভবনটিতে ২ লাখ ৬৬ হাজার বর্গফুট জায়গা রয়েছে। ভেতরে আছে কয়েক কোটি টাকার রড, বাথরুম ফিটিংসসহ নানা মূল্যবান সামগ্রী। চলতি মাসেই ভবনটি ভাঙার কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত রয়েছে। সবকিছু পরিষ্কার করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তিন মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হবে।

তবে সনাতন পদ্ধতিতে ভাঙার ঝুঁকিও আছে। ২০০৮ সালে অপরিকল্পিতভাবে সনাতন পদ্ধতিতে র‌্যাংগস ভবন ভাঙা হয়। তখন ভাঙতে গিয়ে ১১ শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। সে সময়ের গণপূর্তসচিব রশিদুল হাই প্রথম আলোকে জানান, প্রতিদিন দেড় শ শ্রমিক কাজ করে ছয় মাসে ১০ তলা র‌্যাংগস ভবন ভাঙতে সক্ষম হন।

যোগাযোগ করা হলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ তালুকদার বলেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার সময়ে কোনো শ্রমিকের একটি হাতও যেন না ভাঙে, সে বিষয়ে তাঁরা সতর্ক থাকবেন। প্রতিদিন ৫০ জন শ্রমিক কাজ করবেন। তবে ঈদুল ফিতরের আগে–পরে কাজ কিছু কম হবে।