হাজার বছর বাঁচে যে গাছ
বিশ্বজুড়েই উদ্যান ও বাগানে গাছটির দেখা পাওয়া যায়। নাম গিঙ্কগো বাইলোবা। শরতে এর পাতাগুলো আকর্ষণীয় হলুদ বর্ণ ধারণ করে। গাছগুলোর একেকটি বেঁচে থাকে এক হাজার বছরের বেশি সময়। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, তাঁরা গাছটির এই দীর্ঘায়ুর রহস্য জানতে পেরেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের একদল বিজ্ঞানী এই গবেষণা করেছেন। এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণা নিবন্ধ সম্প্রতি প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা (পিএনএএস) সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেসের দাপ্তরিক সাময়িকী এটি।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মেইডেনহেয়ার গাছ নামেও পরিচিত গিঙ্কগো বাইলোবা। জীবনজুড়েই এমন কিছু রাসায়নিক তৈরি করে গাছটি, যা একে রোগ ও খরা মোকাবিলায় সাহায্য করে। এ ছাড়া গাছটির বিশেষ জিনও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।
প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের লাল তালিকায় রয়েছে এই উদ্ভিদ প্রজাতি। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রাণী ও উদ্ভিদকে এই তালিকাভুক্ত করে আইইউসিএন।
উদ্ভিদজগতের গিঙ্কগোলস বর্গের সদস্য গিঙ্কগো বাইলোবা। এই বর্গের বাকি প্রজাতিগুলো এরই মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গাছটির আদিনিবাস চীনে। এখনো দেশটির ঝেজিয়াং এলাকার সিতিয়ানমু পার্বত্য এলাকায় গিঙ্কগো বাইলোবার দেখা পাওয়া যায়। বন উজাড়সহ নানা কারণে বিশ্বের আর কোনো বনে এই গাছ অবশিষ্ট নেই বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে বিভিন্ন উদ্যান ও বাগানে দেখা মিলবে। গিঙ্কগো বাইলোবা প্রজাতির আদিতম যে সদস্যের জীবাশ্মের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, তাও সেই ডাইনোসরদের যুগের।
গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, গবেষণার সময় গিঙ্কগো বাইলোবা গাছের ১৫ বছর থেকে ৬৬৭ বছর বয়সী কয়েকটি সদস্যের কোষ, বাকল, পাতা ও বীজ বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেখেছেন, তরুণ ও বয়স্ক—সব গাছেই খরা বা কোনো জীবাণুর আক্রমণ হলে যে চাপ তৈরি হয়, তা মোকাবিলায় এদের শরীরে একই ধরনের রাসায়নিক তৈরি হয়। এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ও বিশেষ উদ্ভিজ্জ হরমোন উল্লেখযোগ্য। জিন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বয়স হলেও অন্য গাছের মতো এই গাছে বার্ধক্যজনিত কোনো বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় না। এ ধরনের ব্যবস্থাই নেই গাছটিতে। বজ্রপাত বা অন্য কোনো কারণে শরীরের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই প্রজাতির গাছ যেকোনো বয়সেই সেই ক্ষতি পূরণ করতে পারে।