স্মৃতি নিয়েই বাঁচতে হবে ভাবেননি লিপা
গত ১০টা মাস স্বামী মুশতাক আহমেদের স্মৃতির সঙ্গে বসবাস ছিল লিপা আক্তারের। সেই স্মৃতি নিয়েই তাঁকে আজীবন বাঁচতে হবে, কখনো ভাবেননি।
আজ শুক্রবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় মুশতাক আহমেদের বাসায় কথা হয় তাঁর স্ত্রী লিপা আক্তারের সঙ্গে। এর আগে বেলা ১১টা ৫০-এর দিকে তাঁকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনা হয়। স্বজনেরা ধরে ধরে তাঁকে বাসায় ওঠান।
বাসায় পৌঁছেই লিপা আক্তার শাশুড়ি জেবুন্নেসা রাজ্জাককে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। বারবার শুধু বলতে থাকেন, ‘এটা কী হলো!’ কাছে দাঁড়িয়ে তখন নীরবে কেঁদে চলেছেন লিপার শ্বশুর মো. আবদুর রাজ্জাক।
লিপা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়ার পর গত ১০ মাসে একবারের জন্যও তাঁর সঙ্গে মুশতাক আহমেদের দেখা হয়নি। হাইকোর্টে জামিন আবেদনের সময় আদালতে আনা হয় না। সবশেষ ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে নিম্ন আদালতে আনা হয়েছিল। কিন্তু তখন লিপা ছিলেন হাসপাতালে।
তবে সপ্তাহ দুয়েক আগে মুশতাক আহমেদের সঙ্গে লিপা আক্তারের মুঠোফোনে কয়েক মিনিটের জন্য কথা হয়েছিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুশতাক বলল, ও ভালো আছে। কোনো সমস্যা নেই। ওর একটা ছোট ভুঁড়িও হয়েছে, যেটা কখনো ছিল না। আমি তো কাল বিকেল পর্যন্ত জানি ও সুস্থ আছে। এটা কী হলো?’
এটুকু বলে হাঁপিয়ে ওঠেন লিপা আক্তার। যাওয়ার আগে বসার ঘরে থাকা যুগল ছবি দেখান। এর একটি তাঁদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীর। ১৫ বছরের সংসার। এটুকু বলে বিশ্রাম নিতে ফিরে যান নিজের ঘরে।
মুশতাক আহমেদকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর প্রথম জানিয়েছিলেন লিপা। গত বছরের ৪ মে রাতে পরপর দুবার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন তিনি। প্রথম পোস্টে লিপা লেখেন, ‘আমাদের বাসায় র্যাবের নাম করে লোক এসেছে। ওরা ভেতরে ঢুকতে চায়।’ এর কিছুক্ষণ পর আরেকটি পোস্ট দিয়ে তিনি জানান, র্যাব-৩ মুশতাক আহমেদকে ধরে নিয়ে গেছে। তারা সঙ্গে নিয়ে গেছে মুশতাকের সিপিইউ।
এরপর থেকে নিয়মিত লিপা তাঁদের দুজনের ছবি পোস্ট করতেন। একটি পোস্টে লিখেছিলেন, ‘ফেসবুক ভালো সময়ের কথা মনে করায়।’ সেই ৪ মে থেকে একাই লড়াই চালিয়ে গেছেন লিপা।
চতুর্থ দফায় জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর থেকে লিপা অসুস্থ হতে শুরু করেন। তাঁদের পারিবারিক বন্ধুরা প্রথম আলোকে জানান, লিপার মানসিক অসুস্থতা মুশতাককে পীড়া দিচ্ছিল। উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি।
মুশতাক মা-বাবার একমাত্র ছেলে। ২৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় গ্রেপ্তার মুশতাকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আহমেদ কবীর কিশোরের ভাই আহসানুল কবীরের। মুশতাক কফি, প্রিঙ্গেলস আর লেক্সাস বিস্কুট খেতে চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন পরোটা দিয়ে একদিন মাংস খেতে। তাঁরা ভাবতেও পারছেন না, মুশতাক আহমেদ আর কখনো ফিরবেন না।