স্মার্ট কার্ডে ২২ ধরনের সেবা
নাগরিকদের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) বিতরণের কাজ আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকার উত্তরা ও রমনা থানায় এবং কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়াতে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে।
এবারের স্মার্ট কার্ডে ব্যক্তির নাম (বাংলা ও ইংরেজি), পিতা/মাতার নাম, জন্মতারিখ ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন নম্বর দৃশ্যমান থাকবে। কার্ডের পেছনে থাকবে ব্যক্তির ভোটার এলাকার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও জন্মস্থান। তবে সব মিলিয়ে স্মার্ট কার্ডের মধ্যে থাকা চিপ বা তথ্যভান্ডারে ৩২ ধরনের তথ্য থাকবে, যা মেশিনে পাঠযোগ্য হবে।
এবারের স্মার্ট কার্ডের সঙ্গে কাগজের তৈরি ল্যামিনেট করা বিদ্যমান কার্ডের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্লাস্টিকের (পলিমার দিয়ে) তৈরি কার্ডটি মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। কার্ডের মেয়াদ হবে ১০ বছর। নারীদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কার্ডে স্বামীর নাম দৃশ্যমান ছিল। পিতার নাম ছিল না। অপরদিকে পুরুষের কার্ডে স্ত্রীর নাম উল্লেখ ছিল না। একে বৈষম্যমূলক বলে বলা হচ্ছিল। এবার নারীদের স্মার্ট কার্ডে স্বামীর নাম দৃশ্যমান থাকবে না। সেখানে পিতার নাম থাকবে।
কার্ডের তথ্যভান্ডারে ব্যক্তির পেশা, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মনিবন্ধন নম্বর, লিঙ্গ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দৃশ্যমান শনাক্তকরণ চিহ্ন, ধর্ম, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, আয়কর সনদ নম্বর, টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর, মা-বাবা ও স্বামী বা স্ত্রীর পরিচয়পত্র নম্বর, মা-বাবা বা স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুসংক্রান্ত তথ্য, অসমর্থ বা প্রতিবন্ধীর তথ্য ইত্যাদি স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া স্মার্ট কার্ডের ডিজাইনে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় পাখি দোয়েল, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও চা-পাতা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন ও বর্তমান জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ৯ কোটি ভোটারকে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০১১ সালে।
নিরাপত্তা-বৈশিষ্ট্য: স্মার্ট কার্ডে তিন স্তরে মোট ২৫টি নিরাপত্তা-বৈশিষ্ট্য সংযোজিত রয়েছে। প্রথম স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলো খালি চোখে দৃশ্যমান হবে। দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা-বৈশিষ্ট্যগুলো দেখার জন্য যন্ত্রের প্রয়োজন হবে। তৃতীয় স্তরের নিরাপত্তা-বৈশিষ্ট্য দেখতে ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক টেস্টের প্রয়োজন হবে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির পরিচয়পত্রের তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারবে।
যেসব সেবার ক্ষেত্রে লাগবে: ২২ ধরনের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র কাজে লাগবে। আয়করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর পাওয়া, শেয়ার আবেদন ও বিও হিসাব খোলা, ড্রাইভিং লাইসেন্স করা ও নবায়ন, ট্রেড লাইসেন্স করা, পাসপোর্ট করা ও নবায়ন, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, চাকরির আবেদন, বিমা স্কিমে অংশগ্রহণ, স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক হিসাব খোলা, নির্বাচনে ভোটার শনাক্তকরণ, ব্যাংকঋণ, গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের সংযোগ, সরকারি বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, টেলিফোন ও মোবাইলের সংযোগ, সরকারি ভর্তুকি, সাহায্য ও সহায়তা, ই-টিকেটিং, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, আসামি ও অপরাধী শনাক্তকরণ, বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর পাওয়া ও সিকিউরড ওয়েব লগে ইন করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর লাগবে। তবে আইনগতভাবে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়ের নম্বর এখনো বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
প্রাথমিকভাবে পাচ্ছেন: প্রাথমিকভাবে ঢাকা উত্তর সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ড (উত্তরা) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের (রমনা থানা) ভোটারদের মধ্যে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে ৩ থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে। যেকোনো ব্যক্তি ১০৫ নম্বরে ফোন করে তাঁর স্মার্ট কার্ড বিতরণসংক্রান্ত তথ্য জানতে পারবেন।
কমিশন শুরুতে ঢাকার সব ওয়ার্ডে একযোগে কার্ড বিতরণের কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করতে না পারায় আপাতত দুই সিটির চারটি এবং কুড়িগ্রামের দাশিয়ারছড়ায় স্মার্ট কার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্মার্ট কার্ড সংগ্রহের সময় ব্যক্তিকে বিদ্যমান কাগজের তৈরি কার্ডটি জমা দিতে হবে। কার্ড নেওয়ার সময় ব্যক্তির ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ স্ক্যান করা হবে।
জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের মহাপরিচালক সুলতানুজ্জামান মো. সালেহউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কার্ড বিতরণ করতে কী পরিমাণ জনবলের প্রয়োজন হবে, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। সে জন্য প্রাথমিকভাবে ঢাকার চারটি ওয়ার্ড ও কুড়িগ্রামে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখান থেকে ধারণা নিয়ে সারা দেশে জনবল নিয়োগ করে কার্ড বিতরণ করা হবে।’