অনলাইন আলোচনা
সাফল্যের পরও কাজ পায় না বাপেক্স
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের কাজ বিদেশি কোম্পানিকে না দেওয়ার আহ্বান জানান।
কম টাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করার অভিজ্ঞতা থাকলেও সরকারি সংস্থা বাপেক্সকে কাজ না দিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সমালোচনা করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, বাপেক্স এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চসংখ্যক গ্যাসক্ষেত্রও আবিষ্কার করেছে। কিন্তু সংস্থাটিকে বসিয়ে রেখে তাদেরই আবিষ্কৃত ভোলা ও শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের কূপ খননের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে রাশিয়ার গাজপ্রমকে।
পাক্ষিক পত্রিকা এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার আয়োজিত এক ওয়েবিনারে দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ‘বাপেক্স কর্তৃক তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে না দেওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, বাপেক্সের আবিষ্কার করা গ্যাসক্ষেত্র বিদেশিদের হাতে দেওয়ায় সংস্থাটির সব পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা কাজ করছে। বাপেক্সকে বাঁচাতে হলে তাদের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খনন ও উত্তোলনের কাজ তাদেরই দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ। তিনি দেখান, ২০০৯ সাল থেকে বাপেক্স চার হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকায় দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ করেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭০০ কিলোমিটার ছিল ত্রিমাত্রিক জরিপ। এতে প্রতি কিলোমিটারে গড়ে ব্যয় হয় ৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
বাপেক্সের আবিষ্কার করা গ্যাসক্ষেত্র বিদেশিদের হাতে দেওয়ায় সংস্থাটির সব পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা কাজ করছে। বাপেক্সকে বাঁচাতে হলে তাদের আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খনন ও উত্তোলনের কাজ তাদেরই দিতে হবে।অধ্যাপক বদরূল ইমাম, ভূতত্ত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মর্তুজা আহমেদ তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ দেন। যাদের দিয়ে সিলেটে ত্রিমাত্রিক জরিপ করতে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। এ ছাড়া দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় ২ কোটি ৭০ লাখ ও দিঘীপাড়ায় ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়।
উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ১৯৮৯ সালে বাপেক্স প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সংস্থাটি এ পর্যন্ত ১২টি অনুসন্ধান কূপ খনন করে ৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও কূপ খননে বাপেক্সের সাফল্যের অনুপাত ২:১। আন্তর্জাতিকভাবে পাঁচটি কূপ খনন করে একটিতে গ্যাস পেলে সেটিকে সাফল্য বলে মনে করা হয়। দেশে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি শেভরন এখন পর্যন্ত প্রতি চারটি কূপ খনন করে একটিতে গ্যাস পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বাপেক্স নিজেরাই চায় না, তাদের উন্নতি হোক। প্রতিষ্ঠানটি কোম্পানি আইনে চললেও তাদের মনোভাব সরকারি কর্মকর্তাদের মতো। তিনি বলেন, দেশে বিদেশি কোম্পানিও থাকবে, বাপেক্সও থাকবে। এগিয়ে যেতে হলে বাপেক্সের মনোভাব পরিবর্তন দরকার।
অনুষ্ঠানে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ওপর জোর দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ জ্বালানি সহকারী ম তামিম। তিনি বলেন, ‘দেশে ২০২৫ সালের মধ্যে গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করবে। গ্যাস নিঃশেষ হবে ২০৩৫ সালের মধ্যে। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি তেমন নেই।’
পাক্ষিক এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার–এর সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফি, বাপেক্সের সাবেক এমডি মোহাম্মদ মুক্তাদীর আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।