সংকটকালে মানবিক বুদ্ধিদীপ্ত আচরণ কাম্য
এখন আর আগের মতো কেউ দিন-তারিখের হিসাব কষে চলছেন না। দিন ও রাতের মধ্যে পার্থক্য অনেকখানি কমে এসেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বেশির ভাগ মানুষই ঘরে বসেই সময় পার করছেন। কখন দিন পেরিয়ে রাত নামছে, রাত পেরিয়ে দিন—বুঝতে কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে, যেন আজীবনের মতো আমরা বন্দী হয়ে গেছি।
থেমে গেছ জনজীবন। স্বাভাবিক জীবন আর প্রাণভরা নিশ্বাসের শত্রু হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস। খেলাধুলা, আড্ডাবাজি ও ঘুরে বেড়ানো নেই। বিশ্ববিদ্যালয় আর স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ, বন্ধ অফিস-কাছারি আর কারখানাও।
এই করোনা পরিস্থিতির জন্য সামগ্রিকভাবে মানবজাতির দায় আছে, বাংলাদেশ পরিস্থিতির জন্য দায় আছে আমাদেরও। প্রথম দিকে এই ভাইরাসকে আমরা পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করিনি। প্রবাসী যাঁরা সংকটপূর্ণ দেশ ও অঞ্চল থেকে দেশে ফিরেছিলেন, তাঁরা একদিকে নিজেদের ঘর বন্দী রাখেননি। তেমনি এখন আমরা সামাজিক দূরত্বটুকুও আন্তরিকতার সঙ্গে বজায় রাখছি না। শুরু থেকেই যদি আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতাম, তাহলে হয়তো আজকের মতো এত বড় ঝুঁকির মুখে দাঁড়াতে হতো না।
প্রথম দিকে হয়তো অনেকেই কোভিড-১৯, করোনাভাইরাস, মহামারি বা ফ্লুর মতো শব্দগুলোতে রোমাঞ্চ অনুভব করেছেন। অথচ এসব শব্দমালাই এখন সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন, কোয়ারেন্টিন, মৃত্যু, লাশ ও সমাধির মতো বিষয়গুলোকে বারবার সামনে এনে হাজির করছে আমাদের। চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে বেরিয়ে ভাইরাসটি এশিয়া থেকে ইউরোপ, আমেরিকাসহ পুরো পৃথিবী ভ্রমিয়া চলছে। আমেরিকা কতটা শক্তিশালী রাষ্ট্র, তার কতগুলো নিউক্লিয়ার মারণাস্ত্র আছে, আফ্রিকায় কোন দেশ কত দরিদ্র—এসব বিবেচনা করছে না কোভিড-১৯।
অদ্ভুত এক মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে ভাইরাসটি। বাংলাদেশে, যেখানে পারিবারিক বন্ধন অনেক শক্তিশালী, সেখানেও পত্রিকায় খবর আসছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে মাকে নির্জনে ফেলে চলে গেছে সন্তানেরা। কোথাও সারা রাত হাসপাতাল-ক্লিনিকে দৌড়ঝাঁপ করেও অসুস্থ মানুষের সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীকে স্ট্রেচার পর্যন্ত দিতে চাইছেন না সেবাকর্মীরা। আমরা কেউ জানি না এই বিপর্যয় কত দূর পর্যন্ত পৌঁছে দেবে আমাদের!
মহাসংকটের মধ্যেও আমাদের হাল ছাড়লে চলবে না। মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যসেবা–সংক্রান্ত ও আইনি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব, পুরোপুরি লকডাউন মানতে হবে, ছোটখাটো প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। সংক্রমণ এড়াতে মানতে হবে হোম কোয়ারেন্টিন আর সংক্রমিত হলে যেতে হবে আইসোলেশনে। এ ছাড়া অতিপ্রয়োজনে বাইরে যাতায়াতের সময় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষাসংক্রান্ত নিদের্শনাগুলো অনুসরণের বিকল্প নেই।
বিবেক ও বিবেচনা শক্তিকে কাজে লাগানোর এটাই উপযুক্ত সময়। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে অন্যের পাশে দাঁড়াতে হবে। অনুসরণ করতে হবে নিজেকে ও অন্যকে ভালো রাখার উপায়। নিজে, নিজের পরিবার ও দেশকে নিয়ে হেঁয়ালিপূর্ণ আচরণ কোনো বুদ্ধিমান মানুষের কাজ হতে পারে না। এই দুর্যোগে সবার দায়িত্বশীল আচরণই কাম্য।
*লেখক: সবাই ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও স্যোশাল বিজনেস স্টুডেন্ডস ফোরামের সদস্য