শীতলপাটির ঠিকানা
>গরমের সময় ঘুমানোর জন্য স্বস্তিদায়ক বলে গ্রামে শীতলপাটির কদর যুগ যুগ ধরে। ইদানীং শহুরে মানুষের ঘরেও শোভা পায় শীতলপাটি। তবে বড় সংবাদ হলো, শীতলপাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। চলতি মাসেই এ স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো)। শীতলপাটির জন্য প্রসিদ্ধ সিলেট অঞ্চল। সিলেটের বালাগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার শীতলপাটির গ্রাম ও বাজার নিয়ে এবারের প্রতিবেদন
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার কাশীপুর গ্রাম। পাটির জন্য বিখ্যাত বলে পরিচিতি পেয়েছে পাটিপল্লি বলে। গ্রামের পাশ দিয়েই এঁকেবেঁকে চলে গেছে একটা খাল। সে খাল পাড়ের পাটিপল্লিতে গিয়েছিলাম ১৯ ডিসেম্বর। ঘুরতে ঘুরতে দেখা মিলল শীতলপাটি বুননের কর্মযজ্ঞ। বুননকর্মীদের কাছে জানা গেল নানা কথা। সে কথায় ফুটে উঠল অতীত ঐতিহ্যের গর্ব।
কাশীপুর গ্রামের আবদুল জলিল। ৪৭ বছর বয়সের এই পাটিশিল্পী তখন বেতের কাজ করছিলেন। তিনি বললেন, শীতলপাটি বুননের কাঁচামাল হচ্ছে মুরতা বেত। যেটা শুষ্ক মৌসুমে রোপণ করা হয়। বেত পরিপক্ব হলে বর্ষার পানিতে ভিজিয়ে পাটি তৈরির উপযোগী বেতে রূপ দেওয়া হয়। এরপর চলে পাটি বুনন।
কাশীপুর গ্রামে এখন ১৫টি পরিবার শীতলপাটি বুননের সঙ্গে জড়িত। পরিবারের গৃহিণীরাই মূলত পাটি বোনার কাজটি করেন। পুরুষেরা কেবল মুরতা সংগ্রহের বিষয়টি দেখভাল করে থাকেন। তাঁদের এ পেশা চলে এসেছে বংশপরম্পরা।
উঠান ধরে এগিয়ে যাই অন্য বাড়িতে। দেখা সুন্দরী বিবি, রীনা বেগম ও রায়না বেগমের সঙ্গে। এই তিন নারীই বুননকর্মী। ষাট বছর বয়সী সুন্দরীর কাছে জানা গেল শীতলপাটির দাম। একটি শীতলপাটির দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। তবে ফরমাশ দিয়ে পছন্দমতো পাটি তৈরি করাতে আরও বেশি খরচ হয়।
১৫ বছর ধরে পাটি বোনেন রীনা বেগম। পাটি বানানোর প্রক্রিয়া শোনালেন এই শিল্পী। পাটি কোমল ও মিহি করতে বেতগুলো সেদ্ধ করে নিতে হয়। এ ছাড়া পাটিতে নকশা ফুটিয়ে তুলতে হলে রং করতে হয়। এভাবে মাপ ও নকশাভেদে একেকটা পাটি তৈরি করতে তাঁর ১৫ থেকে ২০ দিন, এমনকি পাঁচ থেকে ছয় মাসও সময় লাগে। রায়না জানালেন, শীতলপাটি তৈরির প্রক্রিয়াটি সময় ও শ্রমসাপেক্ষ। একটি ৪ হাত বাই ৫ হাত পাটি তৈরিতে কমপক্ষে ১৬০টি মুরতা বেতের প্রয়োজন পড়ে। এসব বেতের মূল্য পড়ে প্রায় ২৫০ টাকা। এর বাইরে রং বাবদ আরও খরচ পড়ে ২৮০ টাকা। পরিবহন খরচসহ সব মিলিয়ে একেকটি পাটি তৈরিতে যে পরিমাণ খরচ হয়, তা বিক্রি করে লাভ খুব কমই হয়। চলতি বছর তিনি ২৫টি পাটি বুনন করেছেন বলে জানালেন।
শীতলপাটির সাতকাহন
শীতলপাটি নিপুণ হাতের বুননে মুরতা নামে একধরনের ঝোপজাতীয় গাছের বেত দিয়ে তৈরি হয়। গ্রীষ্মকালে শীতল পরশের জন্য বেড়ে যায় শীতলপাটির কদর। পাটির সঙ্গে ‘শীতল’ নামকরণের মাহাত্ম্য এখানেই। এটি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প। সিলেটের বালাগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা মূলত এ শিল্পের আদি স্থান। এর বাইরে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর; হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এবং মৌলভীবাজারের বড়লেখা, রাজনগরসহ সিলেট বিভাগের চার জেলার দুই শতাধিক গ্রামে শীতলপাটি বুননের সঙ্গে কয়েক সহস্রাধিক পরিবার যুক্ত রয়েছে। যুগ যুগ ধরেই বংশপরম্পরায় এসব গ্রামের নারী-পুরুষেরা এই কাজ করেন।
শীতলপাটির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে গরমে ঠান্ডা অনুভূত হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হওয়ার কারণে এই পাটি একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত। সিলেটের চার জেলা ছাড়াও নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় শীতলপাটির কারিগরদের দেখা মেলে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পাটি তৈরি হলেও সিলেটেই বুননশিল্পীদের দেখা বেশি মেলে। এখানে বুননশিল্পীরা বংশপরম্পরায় পাটির বুননকৌশল আয়ত্ত করেছেন।
পাটি আছে হরেক রকম
শীতলপাটির রয়েছে নানা নাম আর জাত। এর মধ্যে ‘পয়সা’, ‘সিকি’, ‘আধুলি’, ‘টাকা’, ‘নয়নতারা’, ‘আসমান তারা’, ‘শাপলা’, ‘সোনামুড়ি’, ‘টিক্কা’ নামের পাটির ব্যবহার গ্রামের গৃহস্থ পরিবারে বেশি। এ ছাড়া অভিজাত পাটি হিসেবে ‘লালগালিচা’, ‘ধাধুলি’, ‘মিহি’ চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা হয়। বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ১০ হাজার টাকায়। ‘সিকি’ পাটি খুবই মসৃণ হয়। কথিত আছে, মসৃণতার কারণে সিকির ওপর দিয়ে সাপ চলাচল করতে পারে না। এসবের বাইরে দৈনন্দিন ব্যবহারের উপযোগী নানা ধরনের পাটি রয়েছে। বুননের মাধ্যমে পাটিতে পৌরাণিক কাহিনিচিত্র, পাখি, ফুল-লতা-পাতা বা অন্যান্য জ্যামিতিক নকশা ও মোটিফ তুলে ধরা হয়। পাটিগুলো সচরাচর ৭ X ৫ ফুট হয়ে থাকে।
শীতলপাটির হাটে
কারও শরীর চাদর দিয়ে মোড়ানো, কেউবা আবার কেবল শার্ট-লুঙ্গি-মাফলার জড়িয়ে এসেছেন। এটি যে গ্রাম্য একটা হাট, সেটা একনজর দেখলেই বোঝা যায়। সেই হাটে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের পাশে দাঁড় করে রাখা অসংখ্য মুরতা বেতের শীতলপাটি। সেই পাটির সামনে দাঁড়িয়ে বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন আর ক্রেতারা মোড়ানো পাটি খুলে মাটিয়ে বিছিয়ে পরখ করে তবেই দরদাম করছেন। ১৯ ডিসেম্বর সকালে এ দৃশ্য দেখা গেছে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর বাজারে। এখানেই প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এভাবেই জমে ওঠে শীতলপাটির হাট।
সালুটিকর এলাকার অবস্থান সিলেটের তিনটি উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে। সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট—এ তিন উপজেলার মাঝামাঝি অবস্থানে থাকায় পাটির হাটটি সব সময় জমজমাট থাকে। জেলার অন্যান্য স্থানে শীতলপাটির আরও কিছু হাট থাকলেও সালুটিকরের হাটের কদর সবচেয়ে বেশি। তার কারণ হচ্ছে সিলেটের যেসব উপজেলায় বন বিভাগের মুরতা বেতের বাগান রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পড়েছে। পাটি তৈরির উপকরণ এখানে বেশি হওয়ায় সালুটিকরে পাটিও মেলে অন্যান্য এলাকার চেয়ে একটু বেশি। সে কারণেই সিলেটজুড়ে এই হাটের এত কদর। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, বর্ষার পুরোটা সময় ও বর্ষা শেষের দুই মাসই মূলত পাটির হাট বেশি জমজমাট থাকে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার হাট বসে। প্রতি হাটবার গড়ে কয়েক শতাধিক পাটি বিক্রি হয়। পুরো বছর এখানে অন্তত ১৫ হাজার পাটির বেচাকেনা হয়। হাটে আসা নানা জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল এসব কথা।
বিক্রেতা বশির মিয়া বললেন, প্রায় এক শ বছর আগে তাঁর দাদার আমল থেকেই এই শীতলপাটির হাট বসছে। এখানে আসা অধিকাংশ বিক্রেতার বাড়ির গৃহিণীরা পাটি তৈরি করে থাকেন। ফকরুল ইসলাম নামের পঞ্চাশোর্ধ্ব আরেক বিক্রেতা জানান, মান, আকার ও কারুকাজের ওপর ভিত্তি করে শীতলপাটির দাম নির্ধারিত হয়। একেকটি পাটি ৮০-১৫০ টাকা (ছোট), ২০০-৫০০ টাকা (মাঝারি) এবং ৫০০-১,২০০ টাকায় (বড়) বিক্রি হয়ে থাকে।
আল-আমিন ও ফয়সাল নামের দুজন এসেছিলেন বাজারে। এই দুই ক্রেতা জানালেন, এ হাটে পাইকারি ও খুচরা দুভাবেই পাটি বিক্রি হয়। সিলেটের অন্যান্য হাটের চেয়ে এখানে তুলনামূলকভাবে সস্তায় পাটি কিনতে পাওয়া যায়। এ কারণে হাটের দুদিন ক্রেতাদের ভিড়ও থাকে বেশি। প্রতি হাটবারেই সিলেটসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাটির ক্রেতারা হাজির হন।
সিলেটের সালুটিকর ছাড়াও মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দাসেরবাজার এলাকায় প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার শীতলপাটির হাট বসে। একই উপজেলার বাংলাবাজার, হাজীগঞ্জ, দক্ষিণভাগ, শাহবাজপুর ও রাজনগর উপজেলা এবং সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জসহ সিলেট বিভাগের চার জেলার অন্তত ৩০টি স্থানে শীতলপাটির হাট বসে। এসব হাট থেকে প্রতিবছর গড়ে অর্ধকোটি টাকার শীতলপাটি দেশ-বিদেশে বিক্রি হয়ে থাকে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ধারণা।
উপহার-উপঢৌকনে শীতলপাটি
সিলেট অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়েসহ নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে শীতলপাটির ব্যবহার অনেকটা বাধ্যতামূলক। এই অঞ্চলে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপঢৌকন হিসেবে বর-কনেকে পাটি দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এখনো গ্রাম এলাকায় কনে ‘নাইওর’ (বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া) থেকে হাতে রঙিন নকশি করা উন্নত মানের পাটি নিয়ে ফেরেন। শহুরে গৃহসজ্জায়ও ব্যবহৃত হয় শীতলপাটি। চাহিদা আছে বিদেশেও। সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্যের গবেষক মোস্তফা সেলিম জানান, তাঁর নিজ এলাকা মৌলভীবাজারের বড়লেখার দাসের বাজারে উৎপাদিত রুপালি বেতের শীতলপাটি মুর্শিদ কুলি খাঁ সম্রাট আওরঙ্গজেবকে উপহার দিয়েছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে আসা ভিনদেশিরা স্মারক হিসেবে সিলেটের শীতলপাটি নিয়ে যান। আদিকাল থেকেই এই প্রথা চলে আসছে। বালাগঞ্জের শীতলপাটি উৎপাদন বিপণন বাজারজাতকরণ সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ফয়ছল আহমদ ও লিটন দাস জানান, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশে আমন্ত্রিত রাজনৈতিক নেতাদের উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে সিলেট অঞ্চলের শীতলপাটি পছন্দের শীর্ষে থাকে। এ ছাড়া নানা সাহিত্য-সংস্কৃতি উৎসব কিংবা ভিনদেশি অতিথিদের উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে শীতলপাটির চাহিদা ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়।
বালাগঞ্জ উপজেলা সদরে ২০০৭ সালে থানা কমপ্লেক্সের বাসিন্দা হিমাংশু ধর ‘পাটিঘর’ নামে একটি শীতলপাটির দোকান চালু করেন। তাঁর দেখাদেখি এখন বাজারে দুটি দোকান প্রতিষ্ঠিত হয়। হিমাংশু জানান, বালাগঞ্জের শীতলপাটির ঐতিহ্য কয়েক শ বছরের। গত কয়েক দশক আগেও উপজেলায় পাটি তৈরিতে কয়েক শ পরিবার জড়িত ছিল, এখন সেটা কমে ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। তাঁর দোকানে বালাগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাটির বুননশিল্পীদের তৈরি পাটি পাওয়া যায়। ৮০০ থেকে ৬০০০ টাকা মূল্যের পাটি তাঁর দোকানে বিক্রি করা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তিনি অর্ডার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাটি পাঠিয়ে থাকেন। তবে মুরতা চাষ কমে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বুননশিল্পীরা পেশা বদলাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
বালাগঞ্জ উপজেলার সাহিত্যকর্মী ইমন শাহ ‘শীতলপাটি’ নামে একটি ছোট কাগজ দীর্ঘ দুই বছর ধরে সম্পাদনা করে আসছেন। তিনি জানান, এ পর্যন্ত তাঁর কাগজের ১৪টি সংখ্যা বেরিয়েছে। সব কটি সংখ্যাতেই লেখার সঙ্গে বালাগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটির নকশা ব্যবহার করার কারণে বিষয়টি দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। এখন শীতলপাটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্থান করে নেওয়ায় তাঁর ভালো লাগছে।
২০ হাজার পাটি বুনেছেন চাম্পা বেগম
শীতলপাটিশিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন ষাটোর্ধ্ব চাম্পা বেগম। জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার কাশীপুর গ্রামে তাঁর বাড়ি। ৩০ বছর ধরে তিনি পাটি বোনেন। তাঁর নিপুণ হাতে এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার পাটি তৈরি হয়েছে। সে হিসাব তিনি নিজেই দিলেন। সাত ছেলের ছয়জনকেই বিয়ে করিয়েছেন। হাতে-কলমে ছেলে-বউদেরও বুনন শিখিয়েছেন। চাম্পা বেগম আক্ষেপ করে বললেন, ‘পাটি বুনতে এখন ম্যালা টেকা লাগে। একটা পাটিতে লাভও বেশি হয় না। অনেকে পুঁজির অভাবে পাটি বানানোর কাম ছাড়ি দিতাছে।’
প্রান্তিক শিল্পীদের স্বীকৃতি
এ মাসের শুরুর কথা। দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে বসেছিল অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় ইউনেসকোর আন্তসরকার কমিটির (ইন্টারগভর্নমেন্টাল কমিটি ফর দ্য সেফগার্ডিং অব দ্য ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ) ১২তম অধিবেশন। ৪ থেকে ৯ ডিসেম্বরের সে অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
অধিবেশন থেকে বাংলাদেশের জন্য খুশির বার্তা আসে ৬ ডিসেম্বর। সারা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় সিলেটের শীতলপাটিকে অন্তর্ভুক্ত করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। ইউনেসকোর ওয়েবসাইটে ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজের (আইসিএইচ) পাতায় বলা হয়েছে, চলতি বছরের অধিবেশনে আর্জেন্ট সেফগার্ডিং বা জরুরি সুরক্ষা, রিপ্রেজেনটেটিভ সেফগার্ডিং বা প্রতিনিধিত্বমূলক সুরক্ষা ও রেজিস্ট্রার অব গুড সেফগার্ডিং প্র্যাকটিসেস বা ভালো সুরক্ষা অনুশীলনের জন্য নিবন্ধন তালিকায় শীতলপাটিসহ বিভিন্ন দেশের ৪২টি ঐতিহ্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আইসিএইচের এই তিনটি বিভাগে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১১৭টি দেশের ৪৭০টি ঐতিহ্যবাহী উপাদান জায়গা পেয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আছে জামদানি, বাউলগান ও মঙ্গল শোভাযাত্রা।
শীতলপাটিকে এই স্বীকৃতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে উদ্যোগটা নিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটিকে ইউনেসকোর অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় ইউনেসকোর আন্তসরকার কমিটির কাছে প্রস্তাব উত্থাপন করে। এরপর কয়েক ধাপে যাচাই-বাছাই করে ইউনেসকো। এরপরই ঠাঁই মিলল তালিকায়।
জাতীয় জাদুঘরের সচিব শওকত নবীর নেতৃত্বে সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে যোগ দেয় সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর তাঁরা মঞ্চে একটি শীতলপাটি প্রদর্শন করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি ও চিত্রশিল্পী হাশেম খান বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির ভিত কত যে শক্ত, সমৃদ্ধ তা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে আমরা ধীরে ধীরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে কাজ করছি। শীতলপাটির স্বীকৃতি সে ধারাবাহিকতায় একটি কাজ। শীতলপাটি প্রাকৃতিক গাছ থেকে তৈরি হয়। এটি একই সঙ্গে কারুশিল্প ও লোকশিল্প। আমাদের প্রান্তিক মানুষেরও যে শৈল্পিক মন কম নয় তার পরিচয় এই শীতলপাটি।’
ছুটির দিনে প্রতিবেদক