শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বিগ্ন বেশির ভাগ তরুণ
দেশের শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বিগ্ন অধিকাংশ তরুণ। তাঁরা মনে করেন, ছাত্র ও শিক্ষকরাজনীতি পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলছে। তরুণেরা বলছেন, বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে চাকরির বাজারের চাহিদার সামঞ্জস্য নেই। ফলে শিক্ষা পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের ৮০ দশমিক ৭ শতাংশই দেশের শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষিত এবং গ্রামীণ এলাকার তরুণদের উদ্বেগ বেশি। প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ তরুণ শিক্ষার মান নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নন। আবার একেবারেই উদ্বেগ নেই, এমন তরুণও আছেন। এ সংখ্যা সাড়ে ৭ শতাংশ।
গত দুই বছরে দেশের শিক্ষার মান নিয়ে তরুণদের ভাবনায় খুব একটা বদল আসেনি। দুই বছর আগেও শিক্ষার মান নিয়ে তরুণদের উদ্বেগের মাত্রা প্রায় একই রকম ছিল। ২০১৭ সালের তারুণ্য জরিপে ৮৩ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।
এবারের জরিপে তরুণ এবং বিশেষজ্ঞদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে তাঁরা যথোপযুক্ত মনে করেন কি না। নেতিবাচক উত্তরই বেশি পাওয়া গেছে। তরুণদের অধিকাংশই মনে করেন, বর্তমান সময়ের সঙ্গে বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি চাপে থাকেন। প্রাইভেট কোচিং একটা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। পরীক্ষার চাপের কারণে শিশুরা আনন্দ নিয়ে শিখতে পারছে না। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু পাঠ্যবইভিত্তিক জ্ঞান দেওয়া হয়, ব্যবহারিক জ্ঞান দেওয়া হয় না। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। ছাত্ররাজনীতি পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে ফেলেছে। শিক্ষকেরা সৃজনশীল উপায়ে শিক্ষা দেওয়ার মতো প্রশিক্ষিত নন।
চাকরির বাজার ও শিক্ষায় বিস্তর পার্থক্য
চাকরির বাজারের চাহিদার সঙ্গে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার সামঞ্জস্য নেই। এ অবস্থার উন্নতি হওয়া দরকার বলে তরুণেরা মনে করেন। যে শিক্ষা তরুণেরা পাচ্ছেন, তার সঙ্গে চাকরির বাজারের চাহিদা না মেলায় উচ্চ ডিগ্রিধারীদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ না থাকা, চাকরিদাতাদের শুধু বিশেষ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাকরি দেওয়ার মানসিকতাও বেকারত্ব বাড়াচ্ছে বলে তরুণেরা মনে করেন।
শিক্ষাব্যবস্থা বদলাতে নানা পরামর্শ
শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো, শিক্ষাকে শিশুদের জন্য শিক্ষাকে আনন্দময় করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিমুক্ত করা, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও রাজনীতি দূর করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, যাঁরা প্রকৃতই শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী, তাঁদের শিক্ষাব্যবস্থার কার্যক্রমে আনতে হবে।
শিক্ষার্থীদের যাতে প্রাইভেট পড়তে না হয়, সে জন্য স্কুলগুলোতে সিলেবাসের পড়া শেষ করতে হবে। যেসব শিক্ষক প্রাইভেট পড়ানোকে উৎসাহিত করেন, তাঁদের অপসারণ করতে হবে।
পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও শিক্ষা খাতের দুর্নীতি বন্ধ, শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা, টিউশন ফি কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন তরুণেরা। তাঁরা বলেছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি না করে বরং তাদের মানসিক উন্নতিকে জোর দিতে হবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না রাখা, প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা বাতিল করার পরামর্শ তরুণদের।