শালবন বিহার খুঁড়ে টেরাকোটা মূর্তি

প্রাচীন সভ্যতার আরও কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে কুমিল্লার কোটবাড়ীর শালবন বৌদ্ধবিহারে। দেড় মাস ধরে সেখানে খননকাজ চলছে। নতুন করে পাওয়া গেছে বেশ কিছু টেরাকোটার ফলক ও মূর্তি।  গতকাল তোলা ছবি ।  এম সাদেক
প্রাচীন সভ্যতার আরও কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে কুমিল্লার কোটবাড়ীর শালবন বৌদ্ধবিহারে। দেড় মাস ধরে সেখানে খননকাজ চলছে। নতুন করে পাওয়া গেছে বেশ কিছু টেরাকোটার ফলক ও মূর্তি। গতকাল তোলা ছবি । এম সাদেক

কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ীতে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা শালবন বৌদ্ধবিহার খনন করে পোড়ামাটির (টেরাকোটা) ফলক ও মূর্তি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে সেখানে দেড় মাস ধরে খননকার্য চলছে। এদিকে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ঢোলসমুদ্র গ্রামে খনন করে একটি প্রাচীন স্থাপনার দেয়াল ও ইটের সন্ধান মিলেছে।
শালবন বৌদ্ধবিহারের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ময়নামতি জাদুঘরে রাখা হয়েছে। খননকাজ গতকাল মঙ্গলবারও অব্যাহত ছিল।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, শালবন বৌদ্ধবিহারের ৩৭ একর এলাকায় ১৯৫৫ সালে থেকে এ পর্যন্ত ৫৯ বছর ধরে পরিচালিত খননকার্যে এ পর্যন্ত বহু নিদর্শন উদ্ধার করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ খননকাজের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে খননকাজ শুরু হয়। চলবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবার বিহারের মূল মন্দিরের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব পাশে একটি মন্দির, একটি স্তূপ ও পোড়ামাটির চিত্রফলক ও একটি বুদ্ধমূর্তির সন্ধান মিলেছে।

কুমিল্লার শালবন বিহার থেকে সম্প্রতি খননে প্রাপ্ত কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ।  প্রথম আলো
কুমিল্লার শালবন বিহার থেকে সম্প্রতি খননে প্রাপ্ত কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন । প্রথম আলো

তবে এ বিহারে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১০টি মন্দির ও আটটি স্তূপ আবিষ্কৃত হয়েছে। এসবের মধ্যে নবম থেকে এগারো শতকের বিভিন্ন ধরনের ৬০টি টেরাকোটা ও মূর্তি রয়েছে। শালবন বৌদ্ধবিহারটি দেব বংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেবের শাসনামলে (খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতক) নির্মাণ করা হয়। এটি ভবদেব মূড়া নামেও পরিচিত।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মো. সোহরাব উদ্দিন বলেন, শালবন বৌদ্ধবিহারের সীমানার মধ্যে কমপক্ষে ১০০টি স্থানে খনন করে এ রকম টেরাকোটা ও মূর্তি পাওয়া যেতে পারে।
ঢোলসমুদ্র গ্রামে প্রাচীন নিদর্শন: গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ঢোলসমুদ্র গ্রামের মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে প্রাচীন নিদর্শন। ইতিমধ্যে সেখানে একটি প্রাচীন স্থাপনার কারুকার্যখচিত ইট ও দেয়ালের দেখা মিলেছে।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে কালিয়াকৈর উপজেলার ঢোলসমুদ্র এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রের খননকাজ চলছে। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি ।  প্রথম আলো
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে কালিয়াকৈর উপজেলার ঢোলসমুদ্র এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রের খননকাজ চলছে। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি । প্রথম আলো

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, এটি কোনো প্রাচীন রাজবাড়ির মন্দির হতে পারে। ওই এলাকায় প্রায় এক হাজার বছর আগে যশোদামাধব পাল নামের এক ব্যক্তি রাজত্ব করতেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, নিদর্শনটি সেন বংশের রাজত্বকালের হতে পারে।
ঢোলসমুদ্রে খননকাজের উদ্বোধন হয় ১৮ জানুয়ারি। পরদিন থেকেই সেখানে সতর্কতার সঙ্গে খনন শুরু করা হয়। আর এক সপ্তাহ পর নিদর্শনটির উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। স্থাপনাটি প্রাচীন ইটের এবং কয়েকটি ইটে অত্যন্ত সুনিপুণ কারুকাজ রয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রাচীন ঐতিহ্যের চেয়ে ঢোলসমুদ্রের নিদর্শনটি একটু ব্যতিক্রমী।