‘লকডাউনের’ খবরে বাজারে ক্রেতাদের ভিড়
দেশে আগামী সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য ‘লকডাউন’ শুরু হবে—দুজন মন্ত্রী এ খবর জানানোর পরই রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আতঙ্কের কেনাকাটা বা প্যানিক বায়িং শুরু হয়ে গেছে। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাজারে ভিড় করছে। কেউ কেউ একসঙ্গে বাড়তি পরিমাণ পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ শনিবার সকালে প্রথম ‘লকডাউনের’ খবর জানান। এরপর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ‘লকডাউনের’ সিদ্ধান্তের কথা জানান। বাজারে ভিড় বাড়তে শুরু করে বেলা দুইটার পর থেকে।
আজ শনিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর অন্যতম বড় তিন বাজার মোহাম্মদপুরের টাউন হল, হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজারে ক্রেতাদের বাড়তি ভিড় দেখা যায়। বেশির ভাগ মানুষ সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য—চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ ও আলু কিনছিলেন।
বেলা সোয়া দুইটার দিকে মোহাম্মদপুরের টাউন হল কাঁচাবাজারের দুই পাশে শের শাহ সূরী সড়ক ও শাহজাহান সড়কে সারি সারি দাঁড়ানো ছিল ব্যক্তগত গাড়ি (প্রাইভেট কার)। ব্যবসায়ীরা জানান, ভরদুপুরে সাধারণত এমন ভিড় থাকে না। লকডাউনের খবর শুনেই ক্রেতারা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাজারে আসছেন। তবে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কেউ কেউ বলছেন, একদিকে মাসের প্রথম শনিবার, অন্যদিকে সামনের সপ্তাহ থেকে রোজা। অনেকেই মাসের ও রোজার বাজার একসঙ্গে করছেন। তাই ক্রেতা কিছুটা বেশি।
ক্রেতাদের একজন জাভেদ হোসেনের হাতে মোটামুটি লম্বা ফর্দ দেখা গেল। তাঁর গাড়ির চালকের হাতে বড় দুটি বাজারের ব্যাগ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজার বাজার গতকাল শুক্রবার করেছি। লকডাউনের খবর শোনার পর আবার বাড়তি কিছু কিনে রাখার জন্য বাজারে এসেছি।’
শ্যামলীর বাসিন্দা মাসুদুল করিম জানান, তিনি বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় বাসা থেকে ‘লকডাউন’ দেওয়ার খবর জানিয়ে ডাল, পেঁয়াজ, আলু ও সবজি নিয়ে যেতে বলা হয়। তিনি বলেন, ‘লকডাউন’ কত দিন থাকে, বলা তো যায় না। তা ছাড়া এই সময়ে বাজারে যত কম আসতে হয় ততই ভালো। তাই যতটুকু সম্ভব বাজার করলাম।
কারওয়ান বাজারের সরকারি অফিসগুলোতে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তারপরও ভিড় অন্যান্য ছুটির দিনের তুলনায় বেশি দেখা গেল। প্রাইভেট কার থামিয়ে অনেকেই কেনাকাটা করছিলেন। তাঁদের একজন মোহাম্মদপুরের জামাল হোসেন। তিনি বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির এই পরিস্থিতিতে বারবার যাতে বাজারে না আসতে হয়, তাই বাড়তি পরিমাণে কিনেছি।
মোটরসাইকেল নিয়ে ইস্টার্ন মল্লিকা থেকে ভিড় ঠেলে হাতিরপুল কাঁচাবাজার পৌঁছাতে আধঘণ্টা সময় লাগল। বিকেল সোয়া চারটায় এই বাজারেও মুদিদোকানের সামনে মানুষের ভিড় দেখা যায়। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দিতে ব্যস্ত ছিলেন দোকানিরাও।
দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। তখন সাধারণ ছুটির আগে বাজারে ব্যাপক ভিড় হয়েছিল। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেশ বেড়ে যায়। এ বছর চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগে থেকেই চড়া।
তবে হাতিরপুল বাজারের ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ ইত্যাদির সরবরাহে ঘাটতি নেই। তিনি মানুষকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন।