পাহাড়িদের স্বাতন্ত্র্যের বিষয়টি বুঝতে পারিনি: আনিসুজ্জামান
ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, ‘সংবিধানের ছয় অনুচ্ছেদের ছোট্ট সংশোধনী উপলক্ষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জাতিত্বের সঙ্গে পাহাড়িদের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার যে বিরোধ সেদিন সূচনা হলো, তার ফল কত সুদূরপ্রসারী, তা এখন আমরা জানি। পাহাড়ি জনসমষ্টির স্বাতন্ত্র্যের বিষয়টি সেদিন আমরা বুঝতে পারিনি।’
রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট সেমিনারে গতকাল সোমবার এক স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এসব কথা বলেন। বাঙলার পাঠশালা বাংলাদেশের সংবিধান দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ সংবিধান তৃতীয় স্মারক বক্তৃতা-২০১৬’ শিরোনামে স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি আহমেদ জাভেদ বলেন, তরুণ প্রজন্মকে দেশের সংবিধান সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলতেই এই স্মারক বক্তৃতার আয়োজন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, পাকিস্তান আমলে পাহাড়িরা কখনো নিজেদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তার কথা বলেনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ থেকে প্রেরণা পেয়েও যে পাহাড়ি বা চাকমা জাতীয়তা বোধের সূচনা হতে পারে, তা একবারও মনে হয়নি।
আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, অনেকের ধারণা দেশের সংবিধান বোধ হয় ইংরেজিটার অনুবাদ। কিন্তু তা নয়। অত্যন্ত অল্প সময়ে বাংলাদেশের সংবিধান সমান্তরাল বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় প্রণীত হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, কোন কোন অভিজ্ঞতা থেকে কোন কোন বিষয় এ দেশের সংবিধানে এসেছে, তা জানতে হবে, বুঝতে হবে। রাষ্ট্রীয় মূলনীতিগুলো কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হলো, কীভাবে কোন মূল্যবোধ এল, তা নতুন প্রজন্মের জানা উচিত।
মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধানে কোনো ভুল-ত্রুটি যে ছিল না, তা নয়। আদিবাসীদের সত্তাটা আমরা পরিষ্কারভাবে সংবিধানে নিয়ে আসতে পারিনি। এটা সে সময়কার একটা ভুল ছিল। সে ভুলের মাশুল দিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের কাছে বোধ দিতে হবে যে এই সংবিধানটা আমাদের সকলের। এটা রক্ষা করার দায়িত্বও সকলের। এই বোধটা হারিয়ে যাচ্ছে, খেদ পড়ে যাচ্ছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়, অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।