রংপুরে পাঁচ বছর ধরে তামাকের চাষ কমছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী আগের তুলনায় জেলায় তামাকের চাষ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে নয় হাজার একর জমিতে তামাক চাষ হতো। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা কমে ৬ হাজার ৩০০ একরে দাঁড়ায়। চলতি বছর তামাক চাষ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমিতে। ২০১১ সালে ৬ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন তামাক উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদন কমতে কমতে চলতি বছর ২ হাজার ৮৭৯ মেট্রিক টনে নেমেছে।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় বেশি তামাক চাষ হতো। সেখানকার তামাকচাষিরা এখন ওই জমিতে ধান, ভুট্টা ও অন্যান্য রবি ফসল আবাদ করছেন। গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ি এলাকার কৃষক মাহবুবুল আলম বলেন, একসময় জমিতে তামাক ছাড়া অন্য কিছু আবাদই করতেন না। তামাকের ক্ষতিকর দিক চিন্তা করে এখন সামান্য জমিতে তামাক চাষ করছেন।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, তিস্তা নদীর চরে একসময় তামাক ছাড়া অন্য কিছু আবাদ হতো না। এখন সেই চরে তামাকের চাষাবাদ নেই বললেই চলে। চরে এখন ভুট্টা, বাদাম ও মিষ্টিকুমড়ার চাষ হচ্ছে। চরে তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে ভুট্টা চাষ করছেন উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের মটুকপুর চরের বাসিন্দা একাব্বর মিয়া। তিনি বলেন, ‘তামাক চাষ করিয়া হামার নিজেরসহ ছাওয়াগুলার কাশি থাকত। অনেক চিকিৎসা করিয়াও ভালো হয় না। পরে হামরাগুলা তামাক চাষ বন্ধ করি দেই। আস্তে আস্তে ছাওয়াগুলার কাশিও ভালো হয়া যায়।’
উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের তালুক হাবু এলাকার স্কুলশিক্ষক কমল কান্ত চার বছর আগেও প্রায় এক একর জমিতে তামাক চাষ করতেন। তিনি বলেন, ‘তামাক চাষ করে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়েছে। হাত-পা জ্বালা করত। এখন আর তামাক চাষ করি না। শরীরও ভালো আছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক আ শ ম আশরাফ আলী বলেন, তামাক চাষ বন্ধ করতে এই এলাকায় নানা সময়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতামূলক অভিযান চালানো হয়। কৃষকেরা এখন তামাক চাষ বাদ দিয়ে ধান, ভুট্টা, বাদামসহ রবি ফসলের আবাদ করছেন। ফলনও ভালো হচ্ছে।