যেখানে দেখিবে ছাই...
আগুন নিভে যাওয়ার পর গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটের পুড়ে যাওয়া কাঁচাবাজারের ভেতরে দোকানিরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। পোড়া ঘরের ভেতর খুঁজে দেখছেন অবশিষ্ট কিছু আছে কি না। যেন এই ধ্বংসস্তূপে মূর্ত সেই প্রবাদ—‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো...’
ছাই ঘেঁটে সেখানে আহামরি কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আধপোড়া কিছু জিনিস হয়তো পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো কাজে লাগবে কি না, কিছু না ভেবেই দোকানিরা সযত্নে তুলে নিয়ে বাইরের রাস্তায় নিয়ে রাখছেন।
রাশেদ নামের একজন রাস্তার ওপর রাখা এসব জিনিস পাহারা দিচ্ছিলেন। তাঁর আত্মীয়ের দোকান পুড়েছে, তাই তিনি এসেছেন তাঁদের সঙ্গে। ওই আত্মীয় ও তাঁর দোকানের কর্মীরা দোকানের ভেতর থেকে পোড়া-আধা পোড়া জিনিসপত্র এনে রাখছিলেন। রাশেদ বললেন, সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার সময় মানুষ যে রকম খড়কুটো ধরে আশ্রয় নেয়, অনেকটা সেই রকমই। এসব জিনিস কতটা কাজে লাগবে বা আদৌ লাগবে কি না, তা না ভেবেই জিনিসগুলো নিয়ে আসছেন তাঁর আত্মীয়।
ফারুক ট্রেডার্স নামের এক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক ফারুক আহমেদের দোকানটি ছিল মুদিপণ্যের। সেখান থেকে গোটা বিশেক চালের বস্তা এনে রাস্তার ওপর রেখেছেন তাঁর দোকানের কর্মীরা। বিদেশি বাসমতী চালের ওই সব বস্তার চাল অনেকটাই পুড়ে গেছে। তারপরও রাখা হচ্ছে—যদি সেখান থেকে কিছু ভালো চাল উদ্ধার করা যায়। দোকানের কর্মীরা জানান, দোকানের কিছুই অবশিষ্ট নেই।
একটি ছোট পিকআপে বড় আকারের বেশ কিছু টুনা মাছ ও কোরাল মাছ এনে রাখছিলেন আরেক দোকানের কর্মীরা। অন্তত ১০ কেজি ওজনের ২৫ থেকে ৩০টি মাছ আগুনের তাপে অনেকটাই আধা সেদ্ধ হয়ে গেছে। পিকআপে করে সেগুলো নিয়ে গেলেন অন্য কোথাও।
রায়হান ট্রেডার্স নামের এক দোকানের ভেতর নির্বাক দাঁড়িয়ে ছিলেন আরিফ হোসেন। তাঁর ভাই রায়হান ও তিনি মিলে চালাতেন কফি, দুধ ও শিশুদের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসা। দোকানের ভেতর আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবই পুড়ে ছাই। পণ্যের সঙ্গে পুড়ে গেছে ক্যাশ বাক্সে থাকা আগের দিনের বিক্রির টাকা। আরিফ জানালেন তাঁদের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মার্কেটের দক্ষিণ পাশের সড়কে কিছু পরিমাণ লবণ, চিনি ও অন্যান্য পণ্যের প্যাকেট একটি বস্তায় ভরে এনে রাখছিলেন আরেক ব্যবসায়ী। এর প্রায় অর্ধেকই আধপোড়া। একটি প্যাকেটে ছিল কিছু কাগজ। জানতে চাইলে তিনি জানালেন, ওখানে নিজের গুরুত্বপূর্ণ সব দলিল ছিল, যার অর্ধেক অংশই পুড়ে গেছে।
মার্কেটটিতে আগুন লাগার সময় বেশির ভাগ ব্যবসায়ী দোকানে না থাকলেও কাঁচামালের কিছু দোকানি সেখানে ছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ কিছু পণ্য বাইরে আনতে পেরেছিলেন। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, যে পরিমাণ বাইরে আনা গেছে, পোড়ার পরিমাণের তুলনায় তা নগণ্য।
একাধিক ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, দুই বছর আগে আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁরা। নানা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে স্বপ্নের পসরা সাজিয়েছিলেন। সে স্বপ্ন আবার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাঁরা বললেন, আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখবেন। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু বারবার আগুনের এই ধ্বংসাত্মক কাজের নেপথ্যে যাঁরা রয়েছেন, অর্থাৎ যাঁদের অবহেলা আর অনিয়মের কারণে এই অগ্নিদুর্ঘটনা, তাঁদের বিচার দেখতে চান তাঁরা।